সহিংসতায় রাঙামাটিতে ক্ষতি ৯ কোটি টাকার বেশি
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রায় ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের সময় শতাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় অর্ধশত গাড়ি। অন্যদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ইউপিডিএফের ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি আজ সোমবার শেষ হওয়ায় রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি শহরে যান চলাচল শুরু হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। তবে মানুষের মনে আতঙ্ক ও ভয় বিরাজ করছে। সাজেকে আটকে পড়া দেড় হাজার পর্যটক এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান গতকাল জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির হিসাবে জেলায় ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবন ও গাড়ি গ্যারেজ এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অস্থায়ী কার্যালয়। কমিটির তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবনে রাখা ৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে ৮টি ব্যাংকে। বনরুপা বাজারে একটি মাইক্রোবাস, কালিন্দীপুরে দুটি মাইক্রোবাস, ১০টি মোটরসাইকেল, ৯টি গাড়ি, ৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬টি ট্রাক, ৩টি বাস, ২টি টু স্ট্রোক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮টি বাড়ি, ৮৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৮৫টি ভাসমান দোকান, ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একটি মসজিদ, একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি আসবাবের দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে চলছে হিসাব
সহিংসতায় খাগড়াছড়িতে অন্তত ১০২টি দোকান পুড়ে গেছে। পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ই এসব দোকানের মালিক। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে।
দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন উর রশিদ জানান, সহিংসতায় শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র দোকানি ও ভাসমান দোকান রয়েছে। অনেক দোকান ভাঙচুর ও অনেকগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক জানতে আরেকটু সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
এম এন লারমা স্কোয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিপন চাকমা জানান, আগুনে পাহাড়িদের ৭টি খাবারের দোকান, দুটি ওষুধের দোকান, দুটি চালের দোকান, একটি মোবাইল ফোনের দোকানসহ অনেক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক ৪ কোটি টাকার ওপরে যাবে বলে মনে করেন দীঘিনালা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর, লুটপাট ও খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ। শহরের মৈত্রী বিহার দেশনালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৈত্রী বিহার অধ্যক্ষ পূন্যজ্যোতি মহাথের, শীলানন্দ মহাথের, নাইন্দাচারা মহাথের প্রমুখ।
-দৈনিক সমকাল