ভারত ম্যাচকে সামনে রেখে পাঁচদিন আগে দল নিয়ে শিলং পৌঁছেছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। উদ্দেশ্য পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া। ম্যাচের ভেন্যুতে অনুশীলন করে দলকে মঙ্গলবারের জন্য প্রস্তুত করা। গত তিনদিন তা কতোটুকু করতে পেরেছেন এই স্প্যানিশ কোচ? উল্টো শিলংয়ে কাটানো সময়টাতে বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন হামজা-জামালরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এখানকার বৈরী আবহাওয়া। গতকাল মেঘের রাজ্যে সকাল থেকেই ছিল মেঘের ঘনঘটা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি। থেমে থেমে সেই বৃষ্টি হয়েছে সারাদিন। দিনের বেলায়ই তাপমাত্রা নেমে কুড়ির নিচে। ম্যাচের আগে এসব প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে নিজেদের তৈরি রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য।
২৫শে মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের বাড়তি আকর্ষণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা বাংলাদেশি ফুটবলার হামজা চৌধুরী। মাত্র তিনটি অনুশীলন সেশনে এরইমধ্যে দলের সঙ্গে মিশে গেছেন বৃটিশ লীগে খেলা এই ফুটবলার। তাকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই এখানকার মানুষেরও। ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতেও হামজা চৌধুরী। ভারতীয় কোচ মানোলো মার্কোও হামজাকে নিয়ে চর্চা করছেন। হামজা যখন বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার প্রহর গুনছেন, দেশকে কিছু দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইছেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশ দলকে নানাভাবে বিরক্ত করছেন ভারতীয়রা। হোটেল থেকে শুরু করে প্র্যাকটিস মাঠ, কোথাও শান্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। প্রথম দিন এবড়ো থেবড়ো মাঠে বাংলাদেশ দলকে প্র্যাকটিস করতে পাঠায় আয়োজকরা। পর দিন দেয় টার্ফের মাঠ। টাকা দিয়ে গতকালও সেখানে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। অনুশীলনের সময় নিয়েও নয়-ছয় করছেন আয়োজকরা। গতকাল শুরুতে বিকাল সাড়ে ৫টায় অনুশীলনের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হলেও পরে জানানো হয় ৪টায় মাঠে যেতে হবে বাংলাদেশ দলকে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত দেনদরবারে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ম্যানেজার আমের খানকে। এসব নিয়ে বিরক্ত দলের সহকারী ম্যানেজার হাসান আল মামুন। তবে মাঠের বাইরে ভারতীয়দের এসব আচরণ পজিটিভ হিসেবে ধরে নিয়েছেন দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আয়োজকরা এমন আচরণ করতেই পারে। এসব মেনে নিয়েই তিনি দলকে প্রস্তুত করছেন। তবে ভারত ফুটবল ফেডারেশনের এমন আচরণে অবাক হয়েছেন ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভারত ম্যাচে খেলা এই দলের পাঁচ ফুটবলার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রহমত মিয়া, সাদউদ্দিন, জামাল ভূঁইয়া ও সোহেল রানা। গতকাল সকালে শিলংয়ের পুলিশ প্লাজার সামনে ইব্রাহিম বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা যখন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে কলকাতা গিয়েছিলাম, তখন কিন্তু এসব ঝামেলায় আমাদের পড়তে হয়নি। প্র্যাকটিস মাঠ থেকে শুরু করে সবকিছু দুর্দান্ত ছিল।’ তাহলে এবার কেন এমন করছে ভারত। এমন প্রশ্নের জবাবে এ ফুটবলার বলেন, ‘আসলে ভারত দলের অবস্থা ভালো না। নতুন কোচ এখনো দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারেনি। তাছাড়া আমাদের দলে হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলার আছে। হয়তো এসব কারণে মাঠের বাইরে আমাদের চাপে রাখার জন্য তারা এসব করছে।’ ২০১৯ সালে সল্ট লেকে সাদিউদ্দিনের গোলে ভারতের সঙ্গে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সেই সাদ ভারতের ওই ম্যাচের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি তুলনা করতে চাই না। তবে অপেক্ষাকৃত সুযোগ সুবিধা তখন অনেক ভালো ছিল। এবার হয়তো ভারত আমাদের অনেক সিরিয়াস হিসেবে নিয়েছে। তাই পদে পদে আমাদের প্রতিপবন্ধকতা তৈরি করছে। আমরা তৈরি আছি। এসব সমস্যা কাটিয়ে ভারতকে জবাব দিতে।’ শিলংয়ে এখন বেশ ঠাণ্ডা। সন্ধ্যার পরে সেটা আরো বেড়ে যায়। কখনও কখনও তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রিতেও এসে দাঁড়ায়। বৃষ্টিতো লেগেই থাকে। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে খুব একটা অভ্যস্ত নয় বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা। যদিও বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের দাবি সৌদি আরবে তায়েফে এমন আবহাওয়ার দুই সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে জামাল-তপুরা।
সেটা এখানে মানিয়ে নিতে কাজে আসবে। সৌদির সেই অভিজ্ঞতা এখানে কতটুকু কাজে আসবে জানতে চাইলে দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার বলেন, ‘তায়েফে ঠাণ্ডা ছিল। তবে এখানকার মতো না। এখানে ঠাণ্ডা একটু বেশি। তাছাড়া শিলং আমাদের দেশের চেয়ে প্রায় ১৫শ কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত। সত্যিই এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার মাঠ সমস্যায় কোচও অনুশীলনটাও ঠিকঠাক করাতে পারছেন না। তাই আমি বলবো সবকিছু মিলিয়ে এখানকার পরিস্থিতি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। তবে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তৈরি আছি।’ শিলংয়ে হিমশীতল ঠাণ্ডার সঙ্গে বৈরী আবহাওয়া, বৃষ্টি, আয়োজকদের বিরূপ আরচরণ সবকিছু মিলিয়ে মাঠের বাইরেই এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। এখান দেখা যাক শেষ দুই অনুশীলন সেশনে বাইরের চ্যালেঞ্জ উতরে মঙ্গলবারের জন্য কতটুকু তৈরি হতে পারেন ফুটবলাররা।
-মানবজমিন