টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া

সম্ভব আর অসম্ভবের ঠিক মাঝখানে পেনালটি শটের বিচিত্র বিন্দুতে দাঁড়িয়ে টাইব্রেকার নামক হাড়িকাঠে কিছুতেই মাথা দিতে চায়নি ব্রাজিল। চায়নি স্নায়ুর পরীক্ষা দিতে। পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর পর কেন কপালরেখা পড়তে হবে তাদের ! কিন্তু ফুটবল ঈশ্বর বুঝি এটিই লিখে রেখেছিলেন। নিষ্ঠুর সেই বিচারে কেঁদেছেন নেইমার, কেঁদেছে তাঁর ব্রাজিল। মরুর বুকও কি কেঁপে ওঠেনি তাতে ? ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকে ৪-২ গোলে হেরে যাবার পর সত্য এটাই যে বিশ্বকাপের রঙধনুতে আর নেই হলুদ, আর নেই ব্রাজিল আর নেই তাদের সাম্বা। আরও একবার চোখের জলেই হেক্সা মিশনের জলাঞ্জলি দিতে হলো তাদের।
ক্রোয়াট যোদ্ধাদের কৌশলের কাছেই যেন তাদের হার মানতে হলো। তারা চেয়েছিল যে কোনোভাবেই হোক ব্রাজিলের শুরুতে গোল করার পর নাচটি বন্ধ করতে হবে। এটাও চেয়েছিল তারা, যে কোনো মূল্যেই হোক ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে হবে। কেননা শেষ আটটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে তারা সাতটি জিতেছে টাইব্রেক করে। সর্বশেষ প্রি-কোয়ার্টারেই জাপানকে হারিয়েছে তারা টাইব্রেকে গিয়ে। গত বিশ্বকাপেও তারা ডেনমার্ক, রাশিয়া আর ইংল্যান্ডকে নকআউট পাঞ্চ বসিয়েছিল পেনালটিতে। সে তথ্য হাতে নিয়েই সতর্ক ছিলেন তিতে। কিন্তু ভাগ্য সত্যিই সহায় ছিল না ব্রাজিলের। তা নাহলে অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের অমন নান্দনিক গোলের পরেও কিনা ক্রোয়েশিয়া কাউন্টার অ্যাটাকে তা শোধ করে দেয়। ১১৬ মিনিটে পেতকোভিচের ওই গোলটির পরই প্রথম ভাঙনের সুর শুনতে পায় ব্রাজিলের গ্যালারি। ১-১ গোলে ম্যাচটি টাই হওয়ার পরেই চূড়ান্ত বিচারে পেনালটি শুট আউটে হার মেনে নিতে হয় সেলেকাওদের। আগের বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের কাছে এই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল নেইমারদের। এবারও এই ইউরোপিয়ান দল নিয়েও বোধহয় মনের মধ্যে খারাপ কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলেন নেইমার। তাই ম্যাচ শুরুর চল্লিশ মিনিট আগে- ‘মে গড ব্লেস অ্যান্ড প্রোটেক্ট আস…’ লেখা একটি পোস্ট ইনস্টাগ্রাম করেন। গতি আর শারীরিক উচ্চতায় কিছুটা আত্মবিশ্বাসী ছিল ক্রোয়াটরা।
আসলে ম্যাচটি যখন পেনালটিতে চলে যায় তখনই যেন মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। প্রথম শটআউটে রদ্রিগোই তা প্রমাণ করেছেন। শেষে এসে মার্কুইহোসের মিস। কোয়ার্টারে এভাবে ভেঙে পড়ার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না নেইমাররা। ধাক্কাটা তাই বড্ড লেগেছে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে। তবে বড় দলের এভাবে ভেঙে পড়ার পর মাঠের নীরবতায় একজনকে বীরের মতোই দেখিয়েছে। বছর আটাশের ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। পুরো ম্যাচটি যিনি একাই আগলে রেখেছিলেন ক্রোয়েশিয়াকে, রুখে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের তীরের মতো ধেয়ে আসা সমস্ত আক্রমণ। কখনও ঢাল এগিয়ে, কখনও বা বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন এই ক্রোয়াট যোদ্ধা।
অথচ ম্যাচজুড়েই ছিল ব্রাজিলের দাপট। ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখের সামনে তখন রীতিমতো বাজার বসে যায়। ব্রাজিলের আক্রমণ আর মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিতোর মতো ডিফেন্ডারের পাও ভিড় করে। কিন্তু এদিন যেন স্পাইডারম্যানের জাল বিছিয়েই রেখেছিলেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। পরপর ঠিক কতগুলো শট তিনি ঠেকিয়েছেন গুনে রাখাও মুশকিল ছিল তখন। পাশে থেকে কেউ একজন পরিসংখ্যান বের করে জানালেন মোট ৯টি শট সেভ করেছেন লিভাকোভিচ। তথ্য প্রদানকারীর মুখের হাসিতে ইঙ্গিত ছিল তিনি ক্রোয়েশিয়া থেকেই ম্যাচটি কভার করতে এসেছেন, ভুল ভাঙল পরে এই জেনে যে তিনি আর্জেন্টাইন !
এবিসিবি/এমআই