Type to search

খেলাধুলা

দাপুটে জয়ে টিকে রইল সেমির আশা বাংলাদেশের

আক্রমণের সঙ্গে পাসিং ফুটবলের পসরা। পিছিয়ে পড়েও আত্মবিশ্বাস না হারানোর মানসিকতা। বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তেরেভা স্টেডিয়ামে সাহসী বাংলাদেশের দেখা মিলেছে রোববার। সুপার সানডেতে দুর্দান্ত তপু বর্মণ-রাকিব হোসেনরা। প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্প লিখলেন শেখ মোরসালিনরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যে মালদ্বীপের কাছে শেষ তিন ম্যাচেই ছিল পরাজয়ের দুঃসহ স্মৃতি; গতকাল সেই দ্বীপ দেশকে একপ্রকার হেসেখেলেই হারাল হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। বাঁচামরার ম্যাচে ঘুচেছে ফরোয়ার্ডদের গোল করতে না পারার আক্ষেপ। পুরো দল একসঙ্গে জ্বলে ওঠায় বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হারাতে পেরেছে মালদ্বীপকে। সাফে ২০ বছর পর মালদ্বীপকে হারানোর তৃপ্তিই নয়; ২০০৯ সালের পর সেমিফাইনালে ওঠার পথে ভালোভাবে টিকে রইল লাল-সবুজরা। ২৮ জুন গ্রুপ ‘বি’তে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারালেই মিলে যেতে পারে শেষ চারের অঙ্ক।

লেবাননের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সের পরও শেষ মুহূর্তের ভুলে হারতে হয়েছিল। সেই ম্যাচের ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠে নামেন জামাল ভূঁইয়ারা। হারলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত, ড্র করলে সুতায় ঝুলে থাকত সেমির ভাগ্য। তাই ‘হয় মারো, নয়তো মরো’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা সোহেল রানা-বিশ্বনাথ ঘোষরা সেরাটা উজাড় করে দিতে মাঠে নামেন। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে মজিবুর রহমান জনি ও সুমন রেজাকে বাদ দিয়ে এ দিন কোচ ক্যাবরেরা প্রথম একাদশে রাখেন রাকিব ও মোহাম্মদ হৃদয়কে। ৪-৪-২ ছকে খেলে ম্যাচের বেশিরভাগ সময় বল দখল এবং আক্রমণে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। লম্বা থ্রো ইন এবং একের পর এক কর্নারে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বলা যায় ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছে একচেটিয়া ফুটবল। কখনোই মনে হয়নি এই দ্বীপ দেশটির কাছে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরেছে। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতে সেই মালদ্বীপ পেয়ে যায় প্রথম গোল। ১৮ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে আলি ফাসিরের পাশে বাড়িয়ে দেন হামজা মোহামেদকে। ২৫ গজ দূর থেকে তাঁর ডান পায়ের নিখুঁত শট দূরের পোস্ট দিয়ে চলে যায় জালে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও বলে হাত লাগাতে পারেননি আনিসুর রহমান জিকো।

গোল হজমে চাপের ম্যাচে বেড়ে যায় আরও চাপ। কিন্তু এই বাংলাদেশ যে লড়াকু। হারার আগে হেরে বসে না। প্রতিপক্ষের সীমানায় সারাক্ষণ বল নিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকা তারিক কাজি-ইসা ফয়সালরা একের পর এক কর্নার আদায় করলেও মালদ্বীপের জালে বল পাঠাতে পারছিল না। রক্ষণ ছেড়ে বারবার ওপরে উঠে আসেন তপু বর্মণ। তাঁর সঙ্গে বিশ্বনাথ ঘোষও আক্রমণভাগের ফুটবলারদের সঙ্গে যোগ দেন। দলীয় প্রচেষ্টার ফল আসে ম্যাচের ৪২ মিনিটে। বাংলাদেশের সমতা ফেরানোর গোলের উৎসে বিশ্বনাথের থ্রো। তাঁর থ্রোয়ে বল পান সোহেল রানা। বাঁ প্রান্ত থেকে বসুন্ধরা কিংসের এ ডিফেন্ডারের ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড নেন তপু বর্মণ। তাঁর থেকে হেডে গোল করেন রাকিব হোসেন। বাংলাদেশের প্রথম গোলের সঙ্গে জড়িত চারজনই বসুন্ধরা কিংসের। সমতা ফেরানোর পর আরও আগ্রাসী বাংলাদেশ। মালদ্বীপের ফুটবলারদের পায়ে বল গেলে মারার সুযোগ দেননি রাকিবরা। আর নিচ থেকে দ্রুতগতিতে বল নিয়ে ওঠে যাওয়ার দৃশ্যটি পুরো পরিকল্পনামাফিক।

আক্রমণের শক্তি বাড়ানোর জন্য বিরতির পর ৬৩ মিনিটে তিনটি পরিবর্তন আনেন কোচ ক্যাবরেরা। জামাল ভূঁইয়া, সোহেল এবং রাকিবকে উঠিয়ে মাঠে নামান মোরসালিন, জনি ও ইব্রাহিমকে। তাতে মাঝ মাঠের শক্তি আরও বেড়ে যায়। তিন বদলের চার মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। এবারও বাংলাদেশের গোলের সঙ্গে জড়িয়ে তপুর নাম। মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে হেড নেন তপু বর্মণ। তাঁর হেড প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় ফেরালে বল পান তারিক কাজি। তিনি শট নিলে গোলপোস্টের নিচে দাঁড়ানো হোসেন নিহান ফেরান। এর পর হেড করে বল জালে জড়ান বসুন্ধরা কিংসের এ ডিফেন্ডার। লেবানন ম্যাচে তাঁর ভুলেই প্রথম গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে সেই ভুলের প্রাশ্চিত্ত যেন করলেন তারিক।

দুই গোলে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ শিবিরে ভয় ছিল শেষ মুহূর্তে আবার না গোল হজম করে। অতীতে অনেক ম্যাচে এমনটি হয়েছিল। কিন্তু এদিন যে ইতিহাস বদলে ফেলার জন্য মাঠে নামে ক্যাবরেরার শিষ্যরা। শেষ দিকে গোল হজম না করে ৯০ মিনিটে মালদ্বীপের কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকেন মোরসালিন। জাতীয় দলের জার্সিতে তৃতীয় ম্যাচে প্রথম গোল করেন ১৮ বছরের এ তরুণ। তাঁর এই গোলটি যে সেমিফাইনালের হিসাব-নিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটু পর রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই মেতে ওঠে বাংলাদেশ। জামালদের এই উচ্ছ্বাস ফুটবলে দিনবদলের ইঙ্গিত।

এবিসিবি/এমআই

Translate »