তৃতীয় স্থান নির্ধারণী আজ: ক্রোয়েশিয়ার সামনে মরক্কো বলেই বাড়তি উত্তেজনা
ফাইনালের স্বপ্ন পূরণ না হলেও কাতার বিশ্বকাপ দু’হাত ভরে দিয়েছে মরক্কোকে। প্রথম আফ্রিকান ও আরব দেশ হিসেবে সেমিফাইনাল খেলে বিশ্বের কোটি দর্শকের হৃদয় জিতে নিয়েছেন হাকিমি-জিয়াচরা। তাই তো ফ্রান্সের কাছে সেমিতে ২-০ গোলে হারের পরও দেশটির জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছেন ফুটবলাররা। ইতিহাস গড়া মরক্কোর সামনে কিন্তু আরও অর্জনের সুযোগ রয়েছে। আর সে সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় ‘অ্যাটলাস লায়ন্স’। ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করতে আজ তৃতীয় হওয়ার জন্যও মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে আফ্রিকার দেশটি। ক্রোয়েশিয়ার জন্য অবশ্য তৃতীয় হওয়া বড় কোনো বিষয় নয়, আগের আসরেই রানার্সআপ হয়েছে তারা। তার পরও অদম্য মানসিকতার ক্রোয়াটরা মোটেই ছাড় দেবে না। তাই আজ খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জমে উঠতে পারে লড়াই।
তবে তৃতীয় স্থানের জন্য খেলতে নামাটাই বেশ কঠিন একটি কাজ।
সেমিতে হেরে হৃদয় ভেঙে যাওয়ার দু’দিন পরই আবার মাঠে নামতে হচ্ছে দু’দলকে। সেটা মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই পরিস্কার করেই বলেছেন, ‘আসলে বিষয়টি দু’দলের জন্যই কিছুটা কঠিন ও জটিল। সেমিফাইনালে হারের হতাশা এখনও কাটেনি। এই হারের দু’দিন যেতে না যেতেই আবার মাঠে নামবে হবে। তাই মানসিকভাবে কাজটা বেশ কঠিন।’ তবে এর সমাধানও খুঁজে পেয়েছেন মরক্কোর কোচ। বিশ্বকাপে যাঁরা এখন পর্যন্ত মাঠে নামার সুযোগ পাননি, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তাঁদের সুযোগ দেবেন বলে জানান তিনি, ‘স্কোয়াডের যারা এখনও মাঠে নামার সুযোগ পায়নি, আজ এ ম্যাচে তাদের সুযোগ দেব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা আমাদের তৃতীয় স্থান এনে দেবে। তাদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণেই আজ আমাদের দলটি একটি নতুন চেহারা পেতে যাচ্ছে। তাই বলে মরক্কোর ফুটবলের মান সর্বোচ্চ পর্যায়েই থাকবে।’
অবশ্য মরক্কোর কোচের সামনে এ ছাড়া পথও খোলা নেই। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কয়েকজনকে নামিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেন্টার-ব্যাক নায়েফ আগুয়েরেডকে শুরুর একাদশে রাখলেও ওয়ার্ম আপের সময় প্রত্যাহার করে নিতে হয়। আরেক সেন্টার-ব্যাক রোমেন সাইসকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে মাঠ থেকে তুলে নিতে হয়। বিরতির সময় এ তালিকায় যুক্ত হন ফুল-ব্যাক নওশায়ার মাজরাউই। আজ এ তিনজনের মাঠে নামা নিয়েই শঙ্কা রয়েছে। পর্তুগালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে একমাত্র গোলটি করা স্ট্রাইকার ইউসেফ এন-নেসিরির খেলা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সেরা একাদশের বেশ ক’জনকে পাচ্ছেন না বলে ফরম্যাটেও পরিবর্তন আনতে হতে পারে রেগরাগুইকে।
পরিবর্তন আসছে ক্রোয়েশিয়ার একাদশেও। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমিতে মাংসপেশিতে টান লাগায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাঠ ছেড়েছিলেন মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রজোভিচ। কুড়ি বছর বয়সী সেন্টার-ব্যাক গার্ডিওল ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন সেদিন। এ দু’জনকে আজ না খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ জল্গাতকো দালিচ। ক্রোয়েশিয়ার জন্য তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলাটা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল সুকের-বোবানদের ক্রোয়েশিয়া। হয়তো সে কারণে আর্জেন্টিনার কাছে ৩-০ গোলে সেমিতে হারের পরদিনই অনুশীলনে নেমে পড়েন মডরিচ-কোভাসিচরা। আর মরক্কোও তাদের অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই যে দু’দল মুখোমুখি হয়েছিল। গোলশূন্য ড্র হওয়া ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচটিতে অবশ্য মরক্কোর পোস্ট লক্ষ্য করে মাত্র পাঁচটি শট নিতে সমর্থ হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেটা ছিল দুই দলের প্রথম ম্যাচ। ওই ড্র থেকেই আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে বেলজিয়ামকে বিদায় করে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোতে নাম লিখিয়েছিল মরক্কো। এর পর নকআউটে স্পেন ও পর্তুগালের মতো জায়ান্টকে বিদায় করে ইতিহাস গড়ে মরক্কো। সে ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই নামবেন রেগরাগুইয়ের শিষ্যরা।
এবিসিবি/এমআই