Type to search

খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের বিশুদ্ধ দর্শকে মুগ্ধ আম্পায়ার সৈকত

৩০ হাজার দর্শক– চিন্তা করতে পারেন! এই একটি লাইন বলে ফোনের ওপারে থমকে গেলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। যেন জনতার ভিড় ঠেলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। আসলে তিনি ভিড়ের মধ্যে ছিলেন না, মাঝমাঠ থেকে ভিড় উপভোগ করেছেন। ব্রিসবেনের গ্যাবার গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড়ের ম্যাচের ফিল্ড আম্পায়ার সৈকত। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটু কি নার্ভাস ছিলেন না অত দর্শক দেখে?

সৈকতের সাফ জবাব, না। বাংলাদেশের এ আম্পায়ার সত্যিই নার্ভাস ছিলেন না। সাহস, উদ্যম ও পেশাদারিত্ব দিয়ে বরং হৃদয় জিতেছেন। গ্যাবায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐতিহাসিক জয়ের টেস্ট ম্যাচে সৈকতে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে বাংলাদেশও। ইমার্জিং আম্পায়ার হিসেবে মেলবোর্ন থেকে ফোনে অস্ট্রেলিয়া জার্নির গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি। যেখানে ছিল ক্রিকেট সংস্কৃতির নান্দনিক গল্পগুচ্ছ।

দেশের আম্পায়ারিংয়ের অনেক প্রথমের সঙ্গী সৈকত। বিশ্বকাপে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন, নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা, নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো বড় পরিসরে নিজেকে মেলে ধরা দেশের প্রথম আম্পায়ার তিনি। নিজ দেশে উপেক্ষিত হলেও ভিন দেশে সমাদৃত। যাকে মূল্যায়ন করে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রমোট করে ইমার্জিং আম্পায়ার হিসেবে। এই একটি প্রমোশন জীবন বদলে দিয়েছে সৈকতের। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ম্যাচ অফিসিয়ালের দায়িত্ব পালন শুভদিনের বার্তা দিচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সৈকতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আম্পায়ারিংয়ে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য ক্রিকেট সংস্কৃতিতে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতিতে সমর্থকদের বড় ভূমিকা আছে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় গেলেই কেবল টেস্টের বিশুদ্ধ দর্শক পাবেন। জীবনে কখনও কল্পনা করিনি ৩০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করব। গ্যাবায় সেটা করতে পেরেছি। এখানে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আম্পায়ার, ম্যাচ অফিসিয়ালদেরও সম্মান দেন সমর্থকরা। সেদিক থেকে বলা যায়, আম্পায়ারিং উপভোগ্য ছিল।’

সৈকতের শুরুর একটি ভুল সিদ্ধান্তকে লুফে নিয়েছিলেন নিন্দুকেরা। কেউ কেউ টুইট করেছেন খোঁচা দিয়ে। তারাই আবার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। পুরো সফর নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সৈকত বলেন, ‘ভালো। বিখ্যাত সব ভেন্যুতে ম্যাচ পরিচালনা করেছি। এ ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট সফলভাবে করতে পারলে ক্যারিয়ারের জন্য ভালো। কারণ, এই সিরিজগুলোতে আইসিসির আম্পায়াস বিভাগের নজর বেশি থাকে। আম্পায়ারদের ভুল করা স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল করার পর কত দ্রুত ফিরে আসতে পারছেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

সৈকতের কাছে অস্ট্রেলিয়া সফর নতুন কিছু না। তিনি তো অস্ট্রেলিয়ার অর্ধেক নাগরিক। তাঁর স্ত্রী পিএইচডি করছেন দেশটিতে। সেখানেই একমাত্র ছেলের জন্ম হয়েছে মাসখানেক আগে। পারিবারিক কারণে প্রবাস জীবন বেছে নিতে হতে পারে তাঁকেও। তাতে কি, ক্রিকেট বিশ্বের কাছে বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবেই থাকবেন তিনি।

তাঁর মতে, ‘আমার কাগজপত্র হলেও দেশ ছাড়ব না। মাঝেমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় আসা হবে। আমার কাজ তো দেশে। বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসিতে নিয়োগ পেয়েছি। এই পেশায় যত দিন আছি, দেশের সম্মান রাখার চেষ্টা করব।’ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও আইসিসি ইমার্জিং আম্পায়ার সৈকত অস্ট্রেলিয়া মিশন শেষ করেছেন মেলবোর্নে ওয়ানডে সিরিজের মধ্য দিয়ে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »