হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে: নেতানিয়াহু
গাজা উপত্যকা থেকে শনিবার চরমপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলি বসতিতে হামলা চালানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের জিম্মি করে। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজা সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ইসরায়েলে আটটি স্থানে সম্ভাব্য হামলাকারীদের সন্ধান চালাচ্ছে তারা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ এর ইউরোপীয় প্রেস ডেস্কের প্রধান মাশা মাইকেলসন ডয়চে ভেলেকে জানিয়ছেন গাজা সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কয়েক লাখ মজুদ সেনাকে পশ্চিমাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ’আমরা খুবই কঠিন ২৪ ঘণ্টা পার করেছি। অভূতপূর্ব অনুপ্রবেশ ও সাধারণ নাগরিকদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে হামাস।’
গতকাল থেকে ৪২৬টি টার্গেটে হামলার কথা জানিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে ১০০টি চালানো হয়েছে ইউএভি বা চালকবিহীন উড়োজাহাজ দিয়ে।
হামাস শনিবার গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। ঐতিহাসিক ইয়ম কিপুর যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তির সময়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
দুই পক্ষের কয়েকশ মুত্যু
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩১৩ জন মারা গেছেন বলে রোববার জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ২০ শিশু রয়েছে। তাদের হিসাবে আহতের সংখ্যা ২০০০ জনের বেশি। এছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বাহিনীর হামলায় এক শিশুসহ সাত জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলে উদ্ধারকারী সংস্থা জাকা জানিয়েছে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ৩০০ জন প্রাণ হানিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫৯০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী ২০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নাগরিক নিহত ও ১০০০ এর ওপরে আহত হয়েছেন।
লেবাননের সঙ্গে উত্তেজনা
এদিকে, লেবাননের হেজবুল্লাহ ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে হামলা চালিয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছে। ইসরায়েলের সেনারা রোববার সকালে জানিয়েছে তারা এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ লেবাননে কামান থেকে গোলা ছুঁড়েছে।
লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে নিয়োজিত জাতিসংঘের শান্তিবাহিনী জানিয়েছে, উত্তেজনা নিরসনে তারা দুই পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
হামাসকে পরাজিত করার অঙ্গীকার নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছেন। ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই যুদ্ধ শেষ হতে সময় লাগবে বলেও টেলিভিশন বক্তৃতায় দেশটির নাগরিকদের জানিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, যা ঘটেছে তা ইসরায়েলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ‘এই কালো দিনের শক্তিশালী প্রতিশোধ নেয়া হবে’, বলেন তিনি। হামাস যেসব স্থানে লুকিয়ে রয়েছে তার প্রত্যেকটি জায়গায় ইসরায়েল অনুসন্ধান চালাবে বলেও জানান নেতানিয়াহু। তিনি আরও বলেছেন, ইসরায়েলের বন্দি সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও তাদের সুস্থতার জন্য হামাস দায়ী থাকবে।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে অভিযান চলাকালে গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
রোববার পোপ ফ্রান্সিস ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’ সংযম ও যদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন।
হামাস যাতে হামলা বন্ধ করে তা নিশ্চিত করতে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশটির পতাকার রঙ্গে শনিবার বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেইটে আলো জ্বালানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এই ছবি পোস্ট করে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস লিখেছেন, ‘ইসরায়েলের প্রতি সংহতি।’
অন্যদিকে আরব লিগের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।
এবিসিবি/এমআই