Type to search

আন্তর্জাতিক

নেভাদায় ঝুলছে ট্রাম্পের ভাগ্য : বাজিমাতের পথে বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলের জন্য দেশটির নাগরিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে। আর পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে কে হচ্ছেন পরবর্তী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সেটি দেখার জন্য। ভোটের এক দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এখনও ভোট গণনা চলছে। এগুলোর ফল প্রকাশ হলে সার্বিক চিত্র পাল্টে যেতে পারে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পপুলার ভোট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সর্বাধিক পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেই রেকর্ড আর অক্ষুন্ন রইল না। এখন ইলেক্টোরাল ভোটে এগিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাবেন বাইডেন।

এদিকে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করা হচ্ছে, ভোটার তথ্য নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে। সে কারণে পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, জর্জিয়া এবং মিশিগানে ভোট গণনা বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে আদালত তা আমলে না নিয়ে ভোট গণনা অব্যাহত রাখতে বলেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বাইডেন পেয়েছেন ২৬৪ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোট। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লাগবে ২৭০টি ভোট।

গণনা শেষ হওয়া রাজ্যগুলোর ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে বাইডেন ‘ম্যাজিক ফিগারের’ (২৭০) প্রায় কাছাকাছি চলে এলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই যে বিজয়ী হবেন, এটা এখনও নিশ্চিত নয়। ভোট গণনা বাকি রয়েছে কয়েকটি রাজ্যে। এর মধ্যে যেকোনো একটি ছোট রাজ্যের ফলও পুরো চিত্র ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিতে পারে। ভোট গণনা শেষ হয়নি পেনসিলভানিয়া (২০), নর্থ ক্যারোলিনা (১৫), জর্জিয়া (১৬), নেভাদা (৬) এবং আলাস্কার (৩) মতো রাজ্যে। এর মধ্যে আলাস্কায় অবশ্য ট্রাম্পের জয় প্রায় নিশ্চিত।

পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া- এই তিনটি বড় রাজ্যেই কিন্তু এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও প্রাপ্ত ভোটে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুবই সামান্য। এদিকে নেভাদায় বাইডেন এগিয়ে থাকলেও দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কম। এ ছাড়া এই রাজ্যের এখনও ২৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়নি। ফলে কিছুই বলা যাচ্ছে না আপাতত।

গণনা বাকি থাকা ৬ রাজ্যের মধ্যে শুধু নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এখানে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ৮ হাজারের কম ভোটে এগিয়ে আছেন। ফলে আরও ২৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে ফল কোনদিকে যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। বাইডেন যদি শেষ পর্যন্ত এখানে হেরে যান তা হলে তার জেতা খুব কঠিন হয়ে যাবে।

তবে বাইডেন এগিয়ে যাচ্ছেন জর্জিয়ার ভোট গণনাতেও। রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জর্জিয়ায় ট্রাম্পের থেকে মাত্র .০৫ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে আছেন তিনি। জর্জিয়াতে প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তবে শেষদিকে এসে বাড়তে শুরু করেছে বাইডেনের ভোট। বর্তমানে ট্রাম্প এ রাজ্যে এগিয়ে আছেন মাত্র ২৭ হাজার ভোটে। মোট ভোটের ৪৯.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। অপরদিকে বাইডেন পেয়েছেন ৪৯.১ শতাংশ ভোট। এ রাজ্যে বাইডেন এগিয়ে গেলে তাকে আটকানোর আর কোনো রাস্তা থাকবে না ট্রাম্পের।

এদিকে এগিয়ে থাকা চার রাজ্যে জয়ের সঙ্গে ট্রাম্পকে আবার নেভাদায় হারাতে হবে বাইডেনকে। তা হলেই হয়তো তিনি ম্যাজিক ফিগার ২৭০ টপকাতে পারবেন। আবার ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা কোনো রাজ্যে বাইডেন যদি জিতে যান তা হলে সহজ জয় পাবেন তিনি। কেননা শতাংশের হিসাবে ফারাক দুদলের মধ্যে খুবই সামান্য। নেভাদায় বাইডেনের চেয়ে মাত্র ০ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। এদিকে পেনসিলভানিয়ায় ২ দশমিক ৬, নর্থ ক্যারোলিনায় ১ দশমিক ৪, জর্জিয়ায় ০ দশমিক ৪ এবং আলাস্কায় ট্রাম্পের চেয়ে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে আছেন বাইডেন। জর্জিয়ায় ৯৮ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে গেছে।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নেভাদার রিপাবলিকান পার্টি নিশ্চিত করেছে কথিত ভোট জালিয়াতির অভিযোগে তারা মামলা করতে যাচ্ছে। তারা দাবি করছে, প্রায় ১০ হাজার লোকের ভোট পড়েছে যারা এখন আর ওই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা নয়। ভোটের জন্য নিবন্ধিত সব প্রাপ্তবয়স্কদের সবাইকে আগাম ব্যালট পেপার পাঠিয়েছিল যে কটি অঙ্গরাজ্য নেভাদা তাদের মধ্যে একটি। নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এতে জালিয়াতির সুযোগ রয়েছে।

এসব কিছুর পর জো বাইডেন বলেছেন, বহু লড়াইয়ের পর অর্জন করা মার্কিন গণতন্ত্র কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিজ রাজ্য ডেলাওয়ারে কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেতে দেশজুড়ে মোট ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জয়ের প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর হিসাব অনুযায়ী ইতোমধ্যে বাইডেন জয় পেয়েছেন ২৬৪টি। এদিকে ট্রাম্প জয় পেয়েছেন ২১৪টিতে।

তাই গণনা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে রাজি নন ভোট পর্যবেক্ষকরা। তবে ফলাফল যাই হোক, সেটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। কারণ ট্রাম্প আগে থেকেই ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ তুলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে মামলা ছাড়াও সামান্য ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণী রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার দাবিও উঠেছে। সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। বাইডেন শিবিরও তার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেই সূত্রের খবর। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা।

Translate »