জাতিসংঘে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সংঘাত
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি দেশ হিসেবে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও মহাসচিব ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউক্রেনের উপর সে দেশের হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়ার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না।
সশরীরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থিত হতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন ভূখণ্ডে পা রাখতে শেষ মুহূর্তে ছাড়পত্র পান তিনি।
রুশ সাংবাদিকরা অবশ্য ভিসা না পাওয়ায় প্রতিনিধিদলের অংশ হতে পারেননি। তার উপর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেশ লাভরভের পাশে বসে সরাসরি ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার কড়া নিন্দা করেন।
তিনি জানান, এই হামলার ফলে ইউক্রেনের মানুষের দুর্দশা ও ধ্বংসলীলা চলছে এবং করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিভ্রাটের আরও অবনতি ঘটছে। গুতেরেস বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন। প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। ফলে বেপরোয়া পদক্ষেপ বা ভুল হিসেবের কারণে সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়ছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ জানান, সম্ভবত শীতল যুদ্ধের তুলনায় আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মাল্টিল্যাটারিজম বা বহুপক্ষীয়তাবাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, সত্যি কথা হলো কেউ তাদের মানবজাতির হয়ে কথা বলার অধিকার দেয়নি।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড লাভরভের ভাষণ সম্পর্কে তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, ‘আজকের সভার ভণ্ড আহ্বায়ক হিসেবে রাশিয়া তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে জাতিসংঘের সনদের মূলে আঘাত করেছে। বেআইনি, প্ররোচনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় এই যুদ্ধ সবচেয়ে পবিত্র নীতির বিরোধী।’
তিনি জানান, আগ্রাসনের লক্ষ্যে যুদ্ধ ও জমি দখল কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘে উভয় পক্ষের প্রবল বাকযুদ্ধ সত্ত্বেও আগামী ১৮ই মে এর পরেও কৃষ্ণ সাগর হয়ে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব সেই ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। তিনি আরও এক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া থেকেও খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি সহজ করার ক্ষেত্রে সহায়তার অঙ্গীকার করেন। রাশিয়া অবশ্য সার রপ্তানি সংক্রান্ত বোঝাপড়া ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে।
গুতেরেশের মতে, বৃহত্তর নিরাপত্তা ও সবার সমৃদ্ধির স্বার্থে এমন সহযোগিতা যে অপরিহার্য, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। রাশিয়া অবশ্য এখনো ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত বোঝাপড়া শেষ করার হুমকি দিয়ে চলেছে।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উলটে ইউক্রেনের সরকারকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে। কিয়েভের প্রশাসনের ‘সন্ত্রাসী হামলা’ এর কারণে খাদ্যশস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের উপর ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে মস্কো।
এবিসিবি/এমআই