Type to search

আন্তর্জাতিক

সৈনিকের আত্মাহুতি বাইডেন প্রশাসনকে কী বার্তা দিচ্ছে

ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েল দূতাবাসের সামনে একজন দায়িত্বে সক্রিয় সেনা সদস্যের আত্মাহুতির ঘটনা ইসরায়েল নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের সবচেয়ে বড় প্রতীকী প্রকাশ। দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে (মার্কিন) বিমানবাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেল নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন এবং ‘ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অ্যারন বলতে থাকেন– তিনি আর গণহত্যার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চান না। বিমানবাহিনীর এ দগ্ধ সেনা গত রোববার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য পলিটিকোর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা অবশ্যই এক ব্যক্তির পদক্ষেপ। গাজায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অবস্থানের কারণে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি অন্যদের যে সমালোচনা, বিমানবাহিনীর ওই সদস্যের পদক্ষেপ তা সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলনও ঘটায় না। তথাপি এ আত্মাহুতি সরকারের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা এতদিন পর্যন্ত পদত্যাগ করা ও আকস্মিক বৈঠকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

নাটকীয় ঘটনাটি জো বাইডেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটল। এরই মধ্যে তিনি গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত শক্ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা তার (ডেমোক্রেটিক পার্টি) অনেক নির্বাচনী আসনে অসন্তোষকে প্রতিধ্বনিত করে। গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মিশিগানে বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক মুসলিম মার্কিনি সেখানে বাস করেন। অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বলেছেন, তিনি নিশ্চত নন যে, মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) সেখানে প্রাইমারি হবে কিনা।

প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে বিমানবাহিনীর সদস্যের আত্মাহুতি মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন চাকরিজীবীর গাজা ইস্যুতে কথা বলতে আরও বেশি সাহস জোগাচ্ছে। অহিংস সামাজিক পরিবর্তনের দীর্ঘদিনের প্রবক্তা ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা মার্কিন সেনা ডেভিড কর্টরাইট স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, তারা বিবেককে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন; সবাইকে উৎসাহ জোগাতে চান।

তিনি বলেন, যারা সরকারি বিভিন্ন বাহিনীতে আছেন, তাদের সামনে থাকে আভিযানিক গন্তব্য; তারা সেই অভিযান ও নৈতিক শৃঙ্খলার প্রতিই দায়বদ্ধ থাকেন। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, গাজায় হামলা নিয়ে চরম হতাশায় বিমানবাহিনীর ওই সদস্য এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

গাজা ইস্যুতে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্থিতিশীলতা ও তোলপাড়ের সঙ্গে পেন্টাগনের (মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর) বৈপরিত্য রয়েছে। সেখানে গত নভেম্বরে স্টাফদের একটি যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠি ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

বিমানবাহিনীর ওই সদস্যের আত্মাহুতি গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনকে কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার নাম প্রকাশ না করে বাইডেন প্রশাসনের একদল কর্মকর্তা গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে হোয়াইট হাউসে চিঠি লিখেছেন। তারা লেখেন, ‘সবচেয়ে সহিংস ও ভয়ানকভাবে একজনের জীবন শেষ হয়ে যাওয়া আমাদের জাতির জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। প্রত্যাশা করি, যারা পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান করছেন, তার আত্মদান তাদের নাড়া দেবে।’

মার্কিন গণমাধ্যমটিতে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংতার বিরুদ্ধে আত্মাহুতির ঘটনাকে ইতিহাসের কয়েকটি সাড়া জাগানো ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। এগুলো হলো– ভিয়েতনামের বৌদ্ধভিক্ষু থিচ কুয়াঙ ডুক, আরব বসন্ত চলাকালে তিউনেশিয়ার সবজি বিক্রেতা মোহামেদ বাওজিজি ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে (মার্কিন) সংগীত তারকা মালাচি রিৎচারের আত্মাহুতি। তাদের কারও আত্মাহুতি শেষতক বিফলে যায়নি।

গাজায় অব্যাহত হামলা এবং অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে অব্যাহত সমর্থনের বিরুদ্ধে অনেকটা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। জো বাইডেন প্রশাসনের অভ্যন্তরেও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। তবে প্রথমবারের মতো মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্য গণহত্যার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অবস্থান নিলেন। অ্যারন বুশনেলের আত্মাহুতি কার্যত পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »