ভারত নির্বাচন: জোটসঙ্গীর যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁসে ঝুঁকিতে নরেন্দ্র মোদি

ভারতের সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর নাতি শত শত নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত। লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই এসব ঘটনার ভিডিও ফাঁস হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। কারণ, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির দলের সঙ্গে জোট করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। নির্বাচনী প্রচারে তাঁর পক্ষে ভোটও চেয়েছেন মোদি। এতে কংগ্রেসের সমালোচনার নিশানা হয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেলেঙ্কারির এ ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।
যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ওই নেতা প্রজওয়াল রেভান্না। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার নাতি ও বর্তমানে সংসদ সদস্য। রেভান্না দক্ষিণ কর্ণাটক রাজ্যের জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বা জেডি(এস)-এর নেতা।
রেভান্নার যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে কয়েক মাস ধরেই বিতর্ক চলছিল। ক’দিন ধরে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হওয়ায় বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মূলত রেভান্নার পক্ষে মোদি ভোট চাওয়ার পরই তাঁর যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তীব্র সমালোচনার মুখে অবশ্য ৩৩ বছর বয়সী ওই নেতার পেছন থেকে দূরে সরে যায় বিজেপি।
ক্ষমতাসীন দলের দাবি, এ ধরনের অপরাধের বিষয়ে তারা জানত না। কিন্তু কংগ্রেস বলছে, সব জেনেও বিজেপি নেতারা জোট করেছেন।
এ বিষয়ে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মোদির ভোট চাওয়া নিয়ে চরম সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘কর্ণাটকে যে নেতার জন্য মোদি ভোট চেয়েছেন, ওই ব্যক্তি হাজার হাজার নারীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। আমার প্রশ্ন, এ বিষয়ে কী বলছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?’
অন্যদিকে রাহুল কর্ণাটকে এক সমাবেশে মোদির সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি সমাবেশে ‘গণধর্ষককে’ সমর্থন করেছেন। প্রত্যেক বিজেপি নেতা জানতেন রেভান্না গণধর্ষক, তবুও তারা জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট করেছিলেন।
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উল্টো কংগ্রেসকেই দুষছেন। তিনি বলেন, কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার কেন রেভান্নার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি?
অভিযুক্ত রেভান্নার দাদা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এর পর তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর গড়া দল জেডি(এস) অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে এ কেলেঙ্কারির ঘটনায়।
পশ্চিম ভারতীয় শহর পুনের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক সঞ্জল শাস্ত্রী বলেছেন, ভিডিওগুলো এডিট করা প্রমাণ করতে হলেও তা মানুষকে বোঝাতে বছর না হলেও কয়েক মাস লেগে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এই কেলেঙ্কারি নির্বাচনে জেডি(এস) ও বিজেপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ, উত্তর কর্ণাটকে এখনও ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি।
২০১৯ সালে বিজেপি কর্ণাটকের ২৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫টিতেই জিতেছিল। কিন্তু কংগ্রেস গত বছর রাজ্য নির্বাচনে শাসক দলকে পরাজিত করে।
এদিকে কর্ণাটকের সংসদীয় আসনগুলোতে বড় ক্ষতি বিজেপি ও এর সহযোগীদের রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে প্রতিবন্ধক হতে পারে।
স্বাধীন রাজনৈতিক ভাষ্যকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিজেপির আসন হাতছাড়া হতে শুরু করলে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রাপ্ত আসন হবে অনেক কম। দলটির আসন ২৭২-এর নিচে নেমে গেলে মোদির জন্য আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া আরও কঠিন হবে। নীলাঞ্জনের মতে, ‘রেভান্নার দাদা দেবগৌড়া জাতীয়ভাবে পরিচিত হওয়ায় এর প্রভাব উত্তর, মধ্য, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতেও পড়বে।’
এবিসিবি/এমআই