পুতিনের কট্টোর সমালোচক নাভানলির কীভাবে মৃত্যু হলো, যা বলছে রাশিয়া

পুতিনের কট্টোর সমালোচক ও রাশিয়ার শীর্ষ বিরোধী রাজনীতিবিদ আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু জন্ম দিয়েছে কৌতূহলের। ১৯ বছর কারাদণ্ড পেয়ে আর্কটিক কারাগারে বন্দী থাকার সময় মারা যান তিনি। কী হয়েছিল তার সঙ্গে?
রাশিয়ার ফেডারেল পেনটেনশিয়ারি সার্ভিস বলেছে, নাভালনি হাঁটতে বের হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তার খারাপ লাগতে পারে জানান। এর মধ্যেই আচমকা অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। চিকিৎসা কর্মীরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিলেন। এমনকী সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সও ডাকা হয়েছিল।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ইতিবাচক কিছু করা সম্ভব হয়নি। প্যারামেডিকরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’
তবে জেলে যাওয়ার আগে থেকেই লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন নাভালনি। ২০২১ সালে তার ওপর বিষপ্রেয়োগও করা হয়েছিল। প্রতিবাদে রাশিয়ার সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনায় রুশ সরকারের আঁতাত ছিল।
মৃত্যুর পর রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, তারা মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে।
আইকে-৩ কলোনি। এখানেই বন্দী ছিলেন নাভালনি। ছবি: রয়টার্স
আইনজীবীদের বলা হয়নি
নাভালনির পক্ষের লোকেরা বলেছে, তাদেরকে মৃত্যুর বিষয়ে জানানো হয়নি। তবে একজন আইনজীবী আর্কটিক অঞ্চলের দূরবর্তী খার্প কারাগারে ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য যাচ্ছেন। পশ্চিমা সরকারগুলো অবশ্য ক্রেমলিনকে দোষারোপ করেছে।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইডে এক্সে লিখেছেন, ‘রুশ সরকারকে এর দায়ভার নিতে হবে।’
জেল কলোনি
নাভালনি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে রাশিয়ার কারাগারে ছিলেন। ‘চরমপন্থার’ অভিযোগে তাকে জেল কলোনিতে সাজা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের আগস্টে সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ১৯ বছর করা হয়। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।
তিনি মস্কো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পূর্বে ভ্লাদিমির অঞ্চলের জেলে আটকের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন।
ডিসেম্বরে তিনি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সেই মাসের শেষে জানা গেল যে তাকে আর্কটিকের খার্পের কুখ্যাত আইকে-৩ কলোনিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
নাভালনি ২৬ ডিসেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছিলেন, আর্কটিক সার্কেলের অভ্যন্তরে প্রত্যন্ত কারাগারে ২০ দিন থাকার পর এখান থেকে তাকে সরানো হয়। তখন তিনি ভালো ছিলেন।
২০১৯ সালে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে নাভালনিকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে রুশ পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
আইকে-৩ মস্কোর প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। কারাগারটির নামের মানে ‘নর্দার্ন লাইটস’। তবে এটিকে ‘পোলার উলফ’ নামেও ডাকা হয়।
কারাগারটি ষাটের দশকে একটি শিবিরের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল। স্ত্যালিনের আমলে এটি ছিল শ্রম শিবির নেটওয়ার্কের অংশ যা গুলাগ নামে পরিচিত। এখানে একসঙ্গে ১ হাজার ২০ জন বন্দী থাকতে পারে। বন্দীদের রেনডিয়ারের চামড়ার চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়।
২০০৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা দিয়ে নাভালনির উত্থান শুরু হয়। ২০১১-১২ সালে রাশিয়ায় বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন তিনি। তবে ২০১৩ সালে অর্থ আত্মসাতের মামলায় প্রথম দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে। তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি তাকে। ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ায় একটি ফ্লাইটের সময় জ্ঞান হারান তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর তাকে বার্লিনের একটি হাসপাতালে সরনো হয়।
বার্লিনের হাসপাতালে পরীক্ষায় দেখা গেছে তাকে সোভিয়েত-যুগের নার্ভ এজেন্ট নোভিচক দিয়ে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। নাভালনি বিষ প্রয়োগের জন্য পুতিনকে দায়ী করেছেন। ক্রেমলিন এই দাবি অস্বীকার করেছে।
এবিসিবি/এমআই