নিরাপত্তা পরিষদ থেকে রাশিয়াকে অপসারণের দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার মুহুর্মুহু হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাশিয়ার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ বাতিলের দাবি করা হয়েছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এ দাবি করে বলেছেন, ‘আমরা উচ্চকণ্ঠে বলছি, রাশিয়াকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে অপসারণ করা হোক।’ এদিকে এ যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চীন। রবিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চাই।’ অন্যদিকে ইরান বলেছে, পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, তাদের ড্রোনের কার্যকারিতা রয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ‘আমাদের ড্রোন নিয়ে তারা শঙ্কিত। আমরা বারবার বলে আসছি যে, আমরা রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করছি না। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব বারবার আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনছে।’
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে আলাপকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেন, ‘আগামীকাল আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের অবস্থান প্রকাশ করব। আমাদের একটি খুব সহজ প্রশ্ন আছে। রাশিয়ার কি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য থাকার এবং আদৌ জাতিসংঘে থাকার অধিকার আছে? আমাদের কাছে এর একটি বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত উত্তর আছে। না! এই অধিকার তাদের নেই!’ এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে নিজের ‘লক্ষ্যের’ কথাও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধে তার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। কথিত ‘ঐতিহাসিক রাশিয়া’ ধারণার উল্লেখ করে পুতিন দাবি করেন, রুশ ও ইউক্রেনীয়রা একই। এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে দেশটিতে রুশ আগ্রাসনের ন্যায্যতা তুলে ধরেন পুতিন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, তার বিশ্বাস রাশিয়া ঠিক পথে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ, আমাদের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করছি। নাগরিকদের রক্ষা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’ এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চীন। রবিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগামী বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করবে তারা।
চীনের রাজধানী থেকে ভিডিও লিংকে একটি সম্মেলনে যুক্ত হয়ে ওয়াং ইয়ি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটনের ভুল চীননীতি বেইজিং দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে পশ্চিমারা। চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উত্পীড়নের অভিযোগ এনেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে চীন। একই সঙ্গে তারা রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের সমালোচনা করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের ইস্যুতে আমরা নিয়মিত মৌলিক নিরপেক্ষতার নীতি ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছি, আমরা কোনো পক্ষকে সমর্থন করিনি কিংবা সংঘাত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখিনি।’ পরিস্থিতি থেকে সুবিধা আদায়ের সবচেয়ে কম চেষ্টা করছে চীন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করলে দ্বিপক্ষীয় আস্থা ও সহযোগিতা উপকৃত হবে।
অন্যদিকে ইরান বলেছে, পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, তাদের ড্রোনের কার্যকারিতা রয়েছে। পশ্চিমারা বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া। যদি তেমনটিই হয়, তাহলে এটা বোঝার বাকি থাকে না যে, তেহরানের ড্রোন শক্তিশালী এবং এর কারণে ঐ দেশগুলো শঙ্কিত। ইরানের সামরিক বাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় জেনারেল এ মন্তব্য করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি—ইরানের তৈরি ড্রোন নিয়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। ওয়াশিংটনের দাবি—ইরান কর্তৃক রাশিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন সরবরাহের বিষয়টি স্পষ্ট এবং এর যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।
গত ১৪ ডিসেম্বর কিয়েভে ইরানের তৈরি ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে ইউক্রেন। মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে শহরের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো এমন দাবি করেন। তিনি বলেন, তার দেশের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী কিয়েভে ইরানের তৈরি ১০টি শাহেদ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, মস্কো ও তেহরানের সামরিক সহযোগিতা ইউক্রেনসহ পুরো দুনিয়ার জন্য হুমকি।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ৩০০টিরও বেশি কামিকাজে ড্রোন সরবরাহ করার বিনিময়ে রাশিয়া এখন ইরানকে উন্নত সামরিক উপাদান সরবরাহ করতে চায়। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এবিসিবি/এমআই