Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

টিউলিপ ইস্যুতে কেলেঙ্কারি ঠেকাতে পারবেন না স্টারমার

দুর্নীতির অভিযোগ ও উদ্বেগের মধ্যে দেশটির নগর মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। টিউলিপ যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতি যা হবার এরই মধ্যে হয়ে গেছে। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনটাই মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রব পাওয়েল।

রব পাওয়েল লিখেছেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির মধ্যে এমন একটি পয়েন্ট আছে, যার পরে পদত্যাগ আরও বেশি প্রশ্নের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ফলে টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একই রকম বিপদ প্রধানমন্ত্রীরও। যদি টিউলিপ এখন পদত্যাগ করেন, তাহলে অসংখ্য মানুষ বিস্মিত হবেন যে, এটা কেন আরও আগে হলো না। কেন ডাউনিং স্ট্রিট এই কাহিনীকে এতটা পথ আসতে দিল। এতে আরও ক্ষতি হবে।

টিউলিপ বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, তিনি কখনোই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেননি।

তবে স্কাই নিউজ উদঘাটন করেছে যে, নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক একটি ব্লগ লিখেছিলেন। তাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি রাজনৈতিকভাবে কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন তা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন এবং তাদের একসাথে ছবি প্রকাশ করেছেন। ২০০৮ সালের শেষের দিকে এবং ২০০৯ সালের শুরুর দিকে টিউলিপ সিদ্দিক তখন লেবার পার্টির একজন কর্মী। তখন লেখা পোস্টে তার খালা শেখ হাসিনার জাতীয় নির্বাচনে তার জন্য যে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং কিভাবে তার বিজয় উদযাপন করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি হয় রাশিয়ার সঙ্গে। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার যোগাযোগ ও ওই চুক্তিতে টিউলিপ সিদ্দিক মধ্যস্থতা করেছিলেন।

বৃটেনে দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও ওই চুক্তি থেকে টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, তাদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের একজন লন্ডন প্রবাসী ডেভেলপার আবদুল মোতালিফ একটি ফ্ল্যাট টিউলিপকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু টিউলিপ তা গোপন করেছেন। অথচ ওই ফ্ল্যাটে তিনি বসবাস করেছেন।

এছাড়া মঈন গণি নামে একজন আইনজীবীও টিউলিপের বোন আজমিন সিদ্দিক রূপন্তিকে একটি ফ্ল্যাট দেন উপহার হিসেবে। তাতেও বসবাস করেন টিউলিপ।  সরকারি নথিতে একাধিকবার তিনি ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের ঠিকানা লিখেছেন। এসব নিয়ে তোলপাড় চলছে বৃটিশ রাজনীতিতে। এরপরই মিনিস্টারিয়েল স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ক নিরপেক্ষ উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন টিউলিপ।

ব্রিটিশ লেবার পার্টির টিকেটে প্রথমবার এমপি হওয়ার পর কিয়ার স্টারমার তার প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স বা জার্মানির মত ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশে না গিয়ে বহু দূরের দেশ বাংলাদেশের ফ্লাইটে চড়ে বসেন।

২০১৬ সালে ব্রিটিশ লেবার পার্টির টিকেটে প্রথমবার এমপি হওয়ার পর বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন স্টারমার । সেই সফরে তিনি ঢাকা আর সিলেট ঘুরে দেখেন।  দামি স্যুট পরে তার বস্তির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়। এক সপ্তাহের সেই সফরে বস্তির গরিব মানুষের অদম্য মনোবল দেখে আপ্লুত হওয়ার গল্প নিয়ে পরে তিনি লন্ডনের পত্রিকায় কলামও লেখেন।

১২০০ পাউন্ডের সেই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল তরুণ ব্রিটিশ এমপি স্টারমারের। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি সই করা ছবি তিনি উপহার দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল লিখেছে, কেউ হয়ত এটাকে সামান্য উপহার ভাবতে পারেন।  কিন্তু ওই সাক্ষাতের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের তখনকার নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজকের স্যার কিয়ার স্টারমারের দীর্ঘ বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল।  এসব কিছুর নেপথ্যে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

শুধু তাই নয়, গতবছর জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার কর্মীরা স্টারমারের ভোটের প্রচারে নামেন। স্টারমারের ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হওয়ার পেছনে সেটাও বড় ভূমিকা রাখে।

ডেইলি মেইল লিখেছে, হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের প্রায় ছয়শ নেতাকর্মীকে গুমের অভিযোগ এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। আর এ বিষয়টি মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাজ্য কিংবা লেবার পার্টির অঙ্গীকারের ঠিক বিপরীত।

এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। যা বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বলে ধরে নেয়া যায়।  এছাড়া ড. ইউনূসের এই অভিযোগের সূত্রে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেইডনক ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সব মিলিয়ে টিউলিপ পদত্যাগ করুক না করুক, ব্রিটিশ রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন স্টারমার।  এই এক ইস্যুতে দেশটির প্রভাবশালী সব সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে।

সব মিলিয়ে টিউলিপ পদত্যাগ করুক না করুক, ব্রিটিশ রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন স্টারমার।  এই এক ইস্যুতে দেশটির প্রভাবশালী সব সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে।

-স্কাই নিউজ

Translate »