Type to search

আন্তর্জাতিক

গাজা পুনর্গঠনে আরব লীগের পরিকল্পনায় যা আছে

দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে গাজা। উপত্যকাটির রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হলে এটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তাব দিয়েছে মিশর। দেশটির এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে আরব ও ইউরোপের দেশগুলো। খবর আল-জাজিরার।

মিশরের পরিকল্পনাটি তিনটি পর্যায় রয়েছে। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা, পুনর্গঠন এবং শাসন। প্রথম পর্যায়টি প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হবে, আর পরবর্তী দুটি পর্যায়টি ৪-৫ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এ প্রস্তাবের লক্ষ্য হল গাজা পুনর্গঠন করা।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, একটি ছয় মাসের অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ফিলিস্তিন সরকার সমর্থিত স্বাধীন টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। এ কমিটি প্রথমে গাজা উপত্যকার প্রধান উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়ক সালাহ আল-দিন স্ট্রিট থেকে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করবে। রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেলে ১.২ মিলিয়ন মানুষের বসবাসের জন্য দুই লাখ অস্থায়ী আবাসন ইউনিট তৈরি করা হবে। এ ছাড়া প্রায় ৬০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুনরুদ্ধার করা হবে।

প্রস্তাবের ব্লুপ্রিন্ট অনুসারে, অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত চার থেকে পাঁচ বছর প্রয়োজন হবে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হল এ সময়ে কমপক্ষে চার লাখ স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ এবং গাজার সমুদ্রবন্দর ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ করা।

পরে ধীরে ধীরে, পানি, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা এবং বিদ্যুতের মতো মৌলিক ব্যবস্থাগুলোও পুনরুদ্ধার করা হবে। পরিকল্পনায় একটি স্টিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি গাজার অন্তর্বর্তী শাসক সংস্থাকে আর্থিক তহবিল দিয়ে সমর্থন করবে।

এ ছাড়াও, উপত্যকা পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের জন্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

মিশর গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়নের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের আহ্বান জানিয়েছে। এই অর্থ তিনটি পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম ছয় মাসের পর্যায়ে সালাহ আল-দিন স্ট্রিট থেকে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে, অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পুনরুদ্ধার করতে তিন বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই বছর সময় লাগবে এবং ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এ পর্যায়ে ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ইউটিলিটি নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং আরও আবাসন ইউনিট তৈরি করা হবে।

তৃতীয় ধাপের আড়াই বছরে খরচ হবে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এতে গাজার সমগ্র জনসংখ্যার জন্য আবাসন সম্পন্ন করা, একটি শিল্প অঞ্চলের প্রথম ধাপ স্থাপন, বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণ এবং অন্যান্য পরিষেবার মধ্যে একটি বিমানবন্দর নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছে ইউরোপের চার বড় দেশ। দেশগুলো হলো ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও জার্মানি। এই চার দেশ এই পরিকল্পনাকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে উল্লেখ করেছে। দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তারা ৫৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন।

চলতি মাসে কায়রোতে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে আরব নেতারা এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শনিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ৫৭ সদস্যের ওআইসির এক জরুরি বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

-আল-জাজিরা

Translate »