Type to search

আন্তর্জাতিক

উত্তাল মনিপুর: প্রকাশ্যে বর্বরতার আরও চিত্র

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা জাতিগত সংঘাতে প্রায় দেড়শ মানুষের প্রাণহানি আর অসংখ্য ঘরবাড়ি, ধর্মীয় স্থাপনা পুড়িয়ে ধ্বংস করে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে সহিংসতা চলাকালে ঘটে যাওয়া যৌন নিগ্রহ ও হত্যার ঘটনা এখন সামনে আসায় আবারও আলোচনায় রাজ্যটি।

প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস মণিপুরে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু কুকি উপজাতির জাতিগত দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। এখানে এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এর আগেও বেশ কয়েকবার সহিংসতা হয়েছে। তবে এসব সহিংসতার ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সংখ্যালঘু কুকি নারীদের ওপর চালানো হয় যৌন নিগ্রহ। খবর গার্ডিয়ান ও ডয়চে ভেলের।

সংঘাতের শুরুটা আসলে এ দুই সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের লড়াই থেকে শুরু হয়। গত মে মাসের শুরুর দিকে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় দাবি করে, তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা সিংহভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এর মাধ্যমে তারা সরকারি চাকরিতে কোটাসহ বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবে।

অন্যদিকে, এ দাবির জোরালো বিরোধিতা করছে কুকিরা। তারা অধিকাংশ খ্রিষ্টান। কুকি সম্প্রদায়ের যুক্তি, ইতোমধ্যে রাজ্যটির সরকারে ও সমাজে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করছে মেইতেইরা। এর পরও তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তারা আরও বেশি শক্ত অবস্থান তৈরি করবে। তখন সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের এলাকার মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা জমি কিনতে পারবে কিংবা বসতি স্থাপন করতে পারবে। এতে তারা হুমকিতে পড়বে।কিন্তু এটিকে ‘বাস্তবিকপক্ষে ভুল’ অভিহিত করে আদিবাসী স্বীকৃতি-সংক্রান্ত রায়টি পরে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করে। কিন্তু ততক্ষণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।

মণিপুরে মেইতেই, কুকি ও নাগা সম্প্রদায়ের আলাদা মিলিশিয়া বাহিনী রয়েছে। বাহিনীগুলো ধর্মভিত্তিক ভিন্নতা ও মাতৃভূমির দাবিতে একে অপরের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই তিন গোষ্ঠীর প্রত্যেকেই আবার ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। এর মধ্যে কুকিরা পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

এদিকে, ভুয়া খবর এবং তথ্য ছাড়ানোর মাধ্যমে সহিংসতা আরও বাড়তে থাকে। দাবি করা হয়েছিল, মেইতেই নারীরা কুকিদের দ্বারা ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হয়েছে। এর পর এর প্রতিশোধ হিসেবে কুকি নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এতে তারা ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হামলা এমনকি শিরশ্ছেদের শিকার হন।

এই সহিংসতার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেকটা নীরব ছিলেন। তিনি এখনও সেখানে পা ফেলেননি। এতে সমালোচিতও হয়েছিলেন মোদি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মে মাসের শেষে মণিপুর সফর করেছেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধবিরতি আনতে বা আলোচনার জন্য দু’পক্ষকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হন।

সর্বশেষ সম্প্রতি দুই কুকি নারীকে নগ্ন করার ভিডিও ভাইরাল হলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর এখন রাজ্যটিতে ধর্ষণ ও হত্যার আরও ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। এ দুই নারীকে নগ্ন করে নির্যাতনের পরদিন ৫ মে রাজধানী ইম্ফলে আরও দুই কুকি নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ৬ মে ইম্ফল পূর্ব জেলায় এক নারীকে নগ্ন করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, প্রায় ৭০ দিন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনার মুখে পুলিশ সব মিলিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »