Type to search

আন্তর্জাতিক

ইরানের শক্তিশালী ৯ ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়ে কাঁপছে ইসরায়েল

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার সমুচিত জবাব দিতে যাচ্ছে তেহরান। এসব হামলায় শতাধিক ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রাখা হলেও মূলত ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে কাঁপনি ধরিয়েছে। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

হামলা না চালাতে শনিবার ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে থেকেই ইরান হামলা চালাবে বলে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে এগোচ্ছে মার্কিন দুটি রণতরী।

রিজার্ভ সেনা ডেকেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী
ইরানি হামলার আশঙ্কায় নতুন করে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো নির্দেশনা জারি না করলেও সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে উত্তর সীমান্তে রিজার্ভ সেনা ডাকা হয়েছে। হামলার আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। গাজায় হামলা শুরুর পর থেকেই উত্তর সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় হচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েলের দূরত্ব

ইরান থেকে ইসরায়েলের আকাশপথে দূরত্ব ১ হাজার ৭২৪ কিলোমিটার। সে হিসেবে নির্দ্বিধায় ইসরায়েলের ভেতরে এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারবে ইরান।

ইরানের বিধ্বংসী ৯ ক্ষেপণাস্ত্র
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরে রয়েছে নানা ধরনের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এমন ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে, যেটি সরাসরি ইরসায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষত ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র উল্লেখযোগ্য।

খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্র (খাইবার)
এটির গতি বায়ুমণ্ডলের বাইরে ১৬ ম্যাক এবং বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ৮ ম্যাক। যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রের গতিকে ম্যাক স্কেলে হিসাব করা হয়। যেখানে ১ ম্যাক হলো ঘণ্টায় গতি ১ হাজার ২৩৪.৮ কিলোমিটার।

সে হিসেবে বায়ুমণ্ডলের বাইরে খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ১৯ হাজার ৭৫৬ কিলোমিটার। অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলের ভেতরে গতি দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার।  ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ৩০ টন, আর পাল্লা ২ হাজার কিমি। দৈর্ঘ্য: ১৩ মিটার, ব্যাস: ১.৫ মিটার।

হাজি কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র
এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ৫ ম্যাক অর্থাৎ ৬ হাজার ১৭৪ কিলোমিটার। ওজন ৭ টন। পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিমি, দৈর্ঘ্য ১১ মিটার। এটিও নির্দ্বিধায় ইসরায়েলের ভেতরে আঘাত হানতে সক্ষম।

খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র
এটির গতি ঘণ্টায় ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি। ওজন ৪ হাজার ৫০০ কেজি। পাল্লা ১ হাজার ৪৫০ কিমি। দৈর্ঘ্য ১০.৫ মিটার। এটিরও আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।

সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র
সিজ্জিলের গতি ১২ থেকে ১৪ ম্যাক বা ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি। ওজন ২৩ টন। পাল্লা ২ হাজার ৫০০কিমি। দৈর্ঘ্য ১৭.৫৭ মিটার।

পাভে ক্ষেপণাস্ত্র
এটির গতি ঘণ্টায় ৬০০ থেকে ৯০০ কিমি। পাল্লা ১ হাজার ৬৫০ কিমি।

ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র
এটির গতিও ৫ ম্যাক। ওজন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ কেজি। পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের বেশি, দৈর্ঘ্য ১২ মিটার।

কদর ক্ষেপণাস্ত্র (ট্রিপল)
কদর ক্ষেপণাস্ত্রের গতি প্রায় ৯ ম্যাক। পাল্লা ১ হাজার ৯৫০ কিমি পর্যন্ত।  ওজন ১৭ হাজার ৪৮০ কেজি পর্যন্ত।

এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র
এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১ হাজার ৭৫০ কেজি। পাল্লা প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিমি।

শাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্র
এর পাল্লা প্রায় ২ হাজার কিমি। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার। ওজন ১ হাজার ৭৮০ কেজি।

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে ইসরায়েল?
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলও নিজেদের বিমান প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বাধুনিক সংযোজন হলো আয়রন ডোম। যা মূলত সব আবহাওয়াতেই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট প্রতিহত করতে পারে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাস হাজার হাজার রকেট বৃষ্টির অর্ধেক আটকাতে পেরেছে বলে দাবি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর। কিন্তু অনেক রকেট লক্ষ্যবস্তূতে আঘাত হানায় ইসরায়েলের ভেতরে অনেক হতাহত হয়। আয়রন ডোম প্রথম ইসরায়েলে ব্যবহার করে ২০০৬ সালে। এই আয়রন ডোমই হলো বিশ্বের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা স্বল্প পরিসরের রকেট এবং ইউএভির হুমকি মোকাবেলায় তৈরি করা হয়েছে। কন্তু ইরানের দূরপাল্লার এসব ক্ষেপণাস্ত্র কতটা রুখতে পারবে, সেটি নিশ্চিত নয়।

৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘আয়রন ডোম সিস্টেম না থাকলে ইসরায়েলি নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বেশি হত, যা অন্য সময়ের মতো জীবন রক্ষাকারী ছিল।’

ইরানের হুঁশিয়ারি
যেকোনো কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা হলে তার জবাব আন্তর্জাতিক আইনে সম্পূর্ণ বৈধ। এ কারণে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইসরাইলকে কঠোর ও অনুশোচনামূলক জবাব দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনী গত বুধবার ঈদুল ফিতরের নামাজের খুতবায় দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরাইলি হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী একটি দেশের কূটনৈতিক মিশনকে ওই দেশের ভূখণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। অপশক্তি ইহুদিবাদী ইসরায়েল ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালিয়ে প্রকারান্তরে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। তাই ইসরাইলকে এই অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হবে এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। খোমেনির এমন হুমকির পর থেকেই উদ্বিগ্ন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েলের পেছনে বাইডেন
মার্কিন সেনারা ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা- গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বাইডেনকে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে বাইডেন বলেন, ইসরায়েলের সুরক্ষায় তার প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় নিবেদিত। আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন করব, ইসরাইলকে রক্ষা করতে সবধরনের সহায়তা করবো। এতে ইরান সফল হবে না।’

এমনটা বললেও পরে আবারও তিনি ‘হামলাা করবেন না’ ইরানের প্রতি এই বার্তা দেন।সূত্র: পার্সটুডে, সিএনএন ও এনডিটিভি।

এবিসিবি/এমআই

Translate »