ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ৪০ হাজার বেসামরিক নিহত, হতাহত দুই লাখ সেনা

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রায় দুই লাখ সৈন্য হতাহত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি। তিনি বলেন, হতাহতদের মধ্যে এক লাখ রাশিয়া এবং এক লাখ ইউক্রেনের সৈন্য। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা দ্য ইকোনমিক ক্লাব অব নিউইয়র্কের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মার্ক মিলি। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশই আত্মশ্লাঘার কারণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি। ছবি- এপি।মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, কিয়েভ পুনরায় মস্কো সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি জানালা খুলে রেখেছে।
আলোচনা শুরু আগে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে বলে এর আগে শর্ত ছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। তবে সম্প্রতি তিনি এই শর্ত শিথিল করেছেন, যা আলাপ-আলোচনার পথ খুলতে চাওয়ার একটি ইঙ্গিত বলে মনে করেন জেনারেল মার্ক মিলি।
তিনি বলেন, তবে আলোচনা ফলপ্রসূ করতে হলে রাশিয়া-ইউক্রেনকে বুঝতে হবে, যুদ্ধে জয়-পরাজয় শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি ও ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জনের ওপর নির্ভর করে না।
জো বাইডেনের সর্বজ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা এই জেনারেল বলেন, আসন শীতে বরফের কারণে যুদ্ধের গতি কমবে। সেই ফাঁকে এই বিপুল হতাহতের দিকে ফিরে তাকিয়ে মস্কো ও কিয়েভকে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝানো যেতে পারে।
জেনারেল মিলি বলেন, প্রচুর মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর ১৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হয়েছেন।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ৭৮ লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে রাশিয়াসহ ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে ইউক্রেনের অসংখ্য মানুষ দেশের ভেতরই দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
সেপ্টেম্বরে মস্কোর সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার মাত্র ৫ হাজার ৯৩৭ জন সৈন্য নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ব্যাপক নিহতের খবর খারিজ করে দিয়েছেন। জেনারেল মিলির অনুমান একেবারে বেশি। ১৯৭৯ থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুদ্ধে ১৫ হাজার সোভিয়েত সৈন্য নিহত হন বলে অনুমান করা হয়।
এদিকে ইউক্রেন হতাহতের কোনো পরিসংখ্যানই প্রকাশ করেনি। তবে গত আগস্টে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধে ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন।
তবে সংঘাতে জড়িতদের দেওয়া কোনো পরিসংখ্যান নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে না জাতিসংঘ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক বছর ধরে চলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে তাই কৌশলী হতে পরামর্শ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কিয়েভ শান্তি আলোচনায় আগ্রহী বলে রাশিয়াকে যাতে ইঙ্গিত দেয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইউক্রেনীয় নেতাদের উৎসাহিত করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি কমাতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বলেও খবর শোনা যাচ্ছে।
এবিসিবি/এমআই