হার মানতে রাজি নন নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের মধ্য দিয়ে তার এই নিঃসঙ্গ যাত্রার পথ প্রশস্ত হলো। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বারবার বিজয়ী দাবি করেছেন নিজেকে; অন্যদিকে প্রমাণহীন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শনিবারও (৭ নভেম্বর) টুইট করে পেনসিলভানিয়ায় ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। তবে তার সাথে একমত নন নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা।
এ ইস্যুতে তার ক্ষমতাকালের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বেশিরভাগই সমর্থন করেননি তাকে। শুধু তাই নয়, ভোটের আগপর্যন্ত অকপটে তাকে সমর্থনকারী সংবাদমাধ্যমগুলোও এখন পাশে নেই তার। ক্রমে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতি বলা হয়, বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন জানাচ্ছে, জো বাইডেনের বিজয়ের সংবাদ প্রকাশের কয়েক মুহূর্ত পরই ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, ‘জো বাইডেন মিথ্যা জয়ের ভাব ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। তবে অনেক দেরি ভোটযুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনও।’ ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের আইনি যুদ্ধ সোমবার থেকে শুরু হবে। ট্রাম্প তার বিবৃতিতে জানান, ভোটের ফলাফল এখনও নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন করেননি এবং এগুলো আসলে বার্তামাধ্যমের পূর্বাভাস মাত্র।
অন্যদিকে কিছু সময় আগে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লেখেন, একটি বড় সংবাদ সম্মেলন হবে ফিলাডেলফিয়ায়। তবে এই সম্মেলনের আর কোনো অর্থ আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব পর্যায় থেকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ট্রাম্প তার স্টাইলেই অভিযোগ করে যাচ্ছেন, পেনসিলভানিয়ায় জালিয়াতি হয়েছে। ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবি ও অভিযোগ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরিকল্পনা নেই তার।
উপরন্তু আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় তিনি। তবে বাইডেন শিবির থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে হোয়াইট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে ট্রাম্পকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে গায়ের জোরে কিছু করার নেই। সিএনএনের খবরে শনিবার বলা হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে জুতসই একজন মানুষও খোঁজা শুরু করেছেন তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কারণ, পরাজিত হয়েও বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাগত জানাতে নারাজ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই গোঁয়ার্তুমির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মৌলিক সৌন্দর্য সংকটে পড়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাথে আলোচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার ব্যাপারে প্রস্তুত নন, এমনটি জানানোর পর তার পাশ থেকে অনেকেই সরে যাচ্ছেন।
সিএনএনের এ-বিষয়ক প্রতিবেদনে কারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছেড়ে যাচ্ছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত না হলেও তার শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কাডলো এর আগে সাফ জানান, চূড়ান্ত ফলাফলে হেরে গেলে প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে আশা করছেন তিনি। কাডলো সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাই বলেছেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। আইনের শাসন মেনে চলি আমরা। তা মানতে হবে প্রেসিডেন্টকেও। এদিকে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্প তার হাতে গোনা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ২ ছেলেসহ সবচেয়ে কাছের মানুষের পরামর্শে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র ও তার ওই উপদেষ্টারা আদালতে ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেইসাথে ট্রাম্পবিমুখ রিপাবলিকান নেতাদের তাদের দিকে ফেরানোর চেষ্টাও করছেন। এ বিষয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোসসহ কয়েকজন উপদেষ্টা ট্রাম্পকে বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝিয়ে উল্টো তার হাতের মুঠো থেকে নির্বাচন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার মন জুগিয়ে চলেছেন। এর আগে ট্রাম্পের পক্ষে কথা বললেও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গণতন্ত্রের জয়ে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ট্রাম্প টেলিভিশন দেখতে দেখতে তার পক্ষে খুব বেশি জনগণকে না দেখে আরও মুষড়ে পড়েন বলে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। অন্যদিকে, মিডিয়া মোগলখ্যাত রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন নিউইয়র্ক পোস্ট, ফক্স নিউজ ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল- এই তিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম তাদের পাঠক বা দর্শকদের ট্রাম্পের পরাজয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে শুরু করেছে। সেইসাথে তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতেও শুরু করেছে। অথচ রুপার্ট মারডকের সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পপন্থি হিসেবে বহুল পরিচিত। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সময় ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল ফক্স নিউজ। এখন ট্রাম্পের বিদায়ের বিষয়ে দর্শকদের সতর্ক করে দিচ্ছে তারা। কীভাবে তার বিদায় নেওয়া উচিত, সে বিষয়েও পরামর্শ দিতে শুরু করেছে তানা। এ কারণে মারডকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।