শিখ নেতার হত্যার বিষয়ে কানাডার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে ভারত
একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতাকে হত্যার বিষয়ে কানাডা কোনো ‘সুনির্দিষ্ট’ তথ্য প্রদান করেলে ভারত তা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার আগে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিবিসির।
কানাডা সম্প্রতি বলেছে, নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বস্ত অভিযোগ তাদের কাছে রয়েছে। তবে ভারত এই দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ভারত সরকার কানাডাকে বলেছিল তারা হত্যার বিষয়ে যেকোনও ‘প্রাসঙ্গিক’ অভিযোগের তদন্ত করতে আগ্রহী। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন এই হত্যার পেছনে দিল্লির কোনও ভূমিকা নেই।
তিনি বলেনম, ‘প্রথমত আমরা কানাডিয়ানদের বলেছি যে এই বিচারবহির্ভূত হত্যা ভারতের নীতি নয়। দ্বিতীয়ত আমরা কানাডিয়ানদের বলেছিলাম, দেখুন, যদি আপনার কাছে নির্দিষ্ট কিছু থাকে, যদি আপনার কাছে প্রাসঙ্গিক কিছু থাকে, যদি এমন কিছু আপনারা জেনে থাকেন তাহলে আমাদের জানান। আমরা এটি দেখার জন্য আগ্রহী।’
গত জুন মাসে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি মন্দিরের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় হারদীপ সিং নিজ্জারকে। তাকে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেয় ভারত।
ভারত সরকার প্রায়ই পশ্চিমা দেশগুলোতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খালিস্তান বা আলাদা শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে করা আন্দোলনে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
হরদীপ সিংকে ভারত খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। শিখদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ নিয়ে ভারতে আশির দশকে তীব্র আন্দোলন। ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ চালিয়ে ব্যাপক হতাহতের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন দমন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এতে হাজারো মানুষ প্রাণ হারায়।
ভারতে এই আন্দোলন স্তিমিত। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো এটি সমর্থন করে না এবং পাঞ্জাবেও দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রমের কথা শোনা যায়নি।
তবে প্রবাসী শিখরা এখনো এই মতবাদে বিশ্বাসী, বিশেষত কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের। এসব দেশে খালিস্তানের স্বপক্ষে যেকোনো উদ্যোগে ভারত বিরক্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করে এসেছে।
জয়শঙ্কর আরও জানান, ভারত কানাডাকে দেশের বাইরে থেকে কার্যক্রম চালানো স্বাধীনতাকামীদের ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ ও তাদের নেতৃবৃন্দের’ বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় এই স্বাধীনতাকামীদের সংশ্লিষ্টতায় অনেক অপরাধ, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা গেছে। আমরা অনেক মানুষকে দেশে (ভারতে) ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। সেখানে অসংখ্য চিহ্নিত জঙ্গি নেতা বসবাস করছেন।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে জয়শঙ্করকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ‘ফাইভ আইজ’ এর কাছ থেকে আসা গোপন তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কানাডায় এক মার্কিন কূটনীতিক গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেন, ‘ফাইভ আইজ নেটওয়ার্কের অংশীদারদের কাছ থেকে কানাডা তথ্য পেয়েছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে পার্লামেন্টে দেওয়া ট্রুডোর বক্তব্যে।’
জয়শঙ্কর এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি ফাইভ আইজের বা এফবিআইর সদস্য নই। আপনি ভুল ব্যক্তিকে প্রশ্ন করছেন।’
এবিসিবি/এমআই