প্রিগোশিন থেকে নাভালনি, পুতিনের যত সমালোচকদের রহস্যজনক মৃত্যু

রাশিয়ার বিরোধী নেতা ও পুতিনের কট্টোর সমালোচক আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গত বছর আরেক সমালোচক ও ভাড়াটে ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভেগেনি প্রিগোশিনের রহস্যময় মৃত্যুর পর পুতিনের বিরুদ্ধে নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠে। ইতিহাস বলছে, বিভিন্ন সময়ে এভাবেই রহস্যময় মৃত্যু মেনে নিতে হয়েছে পুতিনের সমালোচকদের।
বিমান দুর্ঘটনা, জানালা থেকে দুর্ঘটনাজনিত পতন থেকে ফাঁসি, বিষক্রিয়া ও স্বাস্থ্য সমস্যাসহ রুশ প্রেসিডেন্টের অনেক সমালোচককে বিভিন্ন উপায়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অনেক মৃত্যুই থেকে যায় অমিমাংসিত। দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা হিসেবে করা হয় তালিকাভুক্ত।
ইয়েভগেনি প্রিগোশিন
ভাড়াটে ভাগনার গোষ্ঠীর সাবেক প্রধান ও একসময় দেশের অন্যতম শক্তিশালী অলিগার্চ এবং পুতিনের অন্দরমহলের বিশ্বস্ত সদস্য ছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। তিনি ২০২৩ সালে ৬২ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
ইউক্রেন যুদ্ধের কমান্ড নিয়ে মতানৈক্যের জেরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রলালয়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে পুতিনের কালো তালিকাভুক্ত হন তিনি। এর দুই মাস পরেই তার মৃত্যু হয়। রাশিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ছিল মস্কো অভিমুখে প্রিগোশিনের সশস্ত্র যাত্রা। তবে বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে ক্রেমলিনের সম্পর্ক নেই বলে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
বরিস নেমতসভ
বরিস নেমতসভ ছিলেন ক্রেমলিনের সক্রিয় সমালোচক। তিনি নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলতসিনের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রেমলিনের কাছাকাছি একটি সেতুতে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
সিএনএন জানায়, পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যখন তাকে হত্যা করা হয়, তখন তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ান সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করতে সাহায্য করছিলেন।
বরিস বেরেজভস্কি
বরিস বেরেজভস্কি ছিলেন একসময়কার প্রভাবশালী রুশ ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ক্রেমলিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তিনি ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনি বিরাট ধনী হয়েছিলেন। তার অর্থ সম্পদের মোটা অংশ এসেছিল বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি থেকে। কিন্তু তার সম্পদ ও রাজনৈতিক প্রভাব আকাশচুম্বী হয় যখন তিনি রাশিয়ার গণমাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। পুতিনের অনুগ্রহ হারানোর পর তিনি ব্রিটেনে স্থানান্তরিত হন।
২০১৩ সালে বেরেজভস্কিকে তার যুক্তরাজ্যের বাড়ির বাথরুমের মেঝেতে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ব্রিটিশ পুলিশ সে সময় বলেছিল, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
আলেকজান্ডার লিৎভিনেঙ্কো
আলেকজান্ডার লিৎভিনেঙ্কো ছিলেন একজন প্রাক্তন রুশ গুপ্তচর। পরে তিনি ক্রেমলিনের সমালোচনা করেন। ব্রিটিশ তদন্তে বলা হয়েছে, তাকে ২০০৬ সালে লন্ডনের একটি হোটেল বারে দুই রুশ এজেন্টের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তার সঙ্গে ঘটা প্রতিটা কাজের জন্য তিনি পুতিন ও ক্রেমলিনকে দায়ী করেছেন সবসময়।
কিন্তু ক্রেমলিন সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বিষ প্রয়োগে অভিযুক্ত দুই এজেন্টকে ব্রিটেনের কাছে হস্তান্তর করেনি।
রাভিল ম্যাগানভ
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী লুকোইলের বোর্ডের চেয়ারম্যান রাভিল ম্যাগানভ প্রকাশ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করার ছয় মাস পরে মারা গেছেন। মস্কোর একটি হাসপাতালের জানালা থেকে পড়ে তিনি মারা যান। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে।
আনা পলিৎকভস্কায়া
পলিৎকভস্কায়া ছিলেন চেচনিয়ায় রাশিয়ার যুদ্ধের একজন নারী সোচ্চার সমালোচক। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তার মস্কো অ্যাপার্টমেন্টের প্রবেশপথে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার মৃত্য আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া জাগায়।
সের্গেই ম্যাগনিৎস্কি
সের্গেই ম্যাগনিৎস্কি ছিলেন রাশিয়ার ট্যাক্স উপদেষ্টা। তিনি দুর্নীতি ফাঁস করেছিলেন। ফলে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হয়। কিন্তু মুক্তির ঠিক সাত দিন আগে কারাগারে মারা যান। তিনি ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার হন এবং ১৬ নভেম্বর ২০০৬ সালে মারা যান।
আলেকজান্ডার পেরেপিলিচনি
পেরেপিলিচনি ছিলেন একজন ডোনার। তিনি ২০১০ কিছু তথ্য ফাঁস করে আলোচনায় আসেন। রাশিয়ার কোষাগার থেকে ২৩০ মিলিয়ন ডলার চুরির বিবরণ ফাঁস করেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে রাশিয়া ত্যাগ করেন পেরেপিলিচনি। কিন্তু ২০১২ সালে লন্ডনের কাছাকাছি জগিংয়ের সময় মারা যান।
যদিও তিনি সম্ভবত প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, তবে তাকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে।
এবিসিবি/এমআই