সাংবাদিকের ডায়েরী: প্রসঙ্গ ধর্ষন মামলার আসামী শাকিল আহমেদ

সাংবাদিক শাকিল আহমেদ
স্বপ্না গুলশান:
৭১ টিভির হেড অফ নিউজ শাকিল আহমেদ । যিনি হলেন বর্তমানে ধর্ষন মামলার আসামী। গ্রেপ্তার এড়াতে হাইকোর্ট থেকে অগ্রিম জামিন ও নিয়েছেন তিনি। শাকিলের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলোচিত সমালোচিত সাংবাদিক ফারজানা রুপার স্বামী । এই ফারজানা রুপা সবখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার নাম ভাঙ্গিয়ে কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন ।
দুর্নীতি, ধান্দাবাজী আর উপরের মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন এই শাকিল ফারজানা দম্পত্তি। আমেরিকার নিউজার্সিতে কিনেছে বিলিয়ন ডলারের বাড়ি, গাজীপুরে বানিয়েছে বিশাল বাগান বাড়ি , ঢাকাতে আছে নামে বেনামে বেশকটি ফ্লাট আর ব্যাংকে আছে নামে বেনামে অঢেল টাকা। পাহাড় ও কিনেছেন এই ধুরন্ধর সাংবাদিক দম্পত্তি শাকিল রুপা ।
ধান্দাবাজি করে প্রভাব খাটানো তাদের কৌশল। সে বিবেচনায় শাকিলের কাছে প্রতারিত হওয়া ভিকটিমের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছেন অনেকেই ।
গর্ভপাত করানোর পরে মেয়েটিকে আর বিয়ে করেননি শাকিল । বরং ভয়ভীতি হুমকী ধামকী দিয়ে ভিকটিমের মুখ বন্ধ করানোর চেষ্টা করেন তিনি । অতি কৌশলে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে চলা স্ত্রী ফারজানা রুপার ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে তার কাছে প্রতারিত হওয়া প্রতিটি নারীর মুখ বন্ধ করে রাখেন ধুরন্ধর এই শাকিল আহমেদ ।
একদিকে কৌশলে স্ত্রীর মন রক্ষা করে চলেছেন আরেকদিকে মেনটেন করেছেন ৫৫ টি গার্লফ্রেন্ড ৭১ টিভির ভন্ড এই নিউজ বস।
শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে ডাক্তার তৃণার আনা ধর্ষনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এমন হাজারো অভিযোগ আছে এই শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে ৭১ টিভির ন্যাশনাল ডেস্কের আরেক নারীকে নিয়ে হাতে নাতে গুলশানের একটি হোটেলে পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছিলেন শাকিল । সেসময় ৭১ এর আরেক নিউজ বস মোজাম্মেল বাবুর সহায়তায় পুলিশের হেনস্তা থেকে রক্ষা পায় শাকিল আহমেদ । শাকিলের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড ৭১ টিভি ও মিডিয়ার সবাই ওপেন সিক্রেট হিসেবেই জানে ।
চরম মীরজাফর টাইপের এই ভন্ড শাকিল আহমেদ ও তার পালিত সিন্ডিকেট গ্রুপের নারীসদস্য নাজনীন মুন্নী,ঝুমুর বারী ফারহানা রহমান, তানিয়া রহমান, ফারজানা রুপাসহ আরো অনেকে একজোট হয়ে একুশে টিভিতে আমি সহ অনেকের বিরুদ্ধে জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। সেখান থেকেই শাকিল আহমেদ ও তার সিন্ডিকেট বাহিনীর সাথে পরিচয় ঘটে আমার।
২০০৭/২০০৮ সালের কথা। সেসময়ে বৈশাখী টিভি থেকে একুশেতে জয়েন করি আমি । একসাথে সাজু রহমান , মিঠুন মোস্তাফিজ, সাজেদ রোমেল, অখিল পোদ্দার , মাহাথীর ফারুকী সহ অনেকে জয়েন করেছিলাম আমরা। তবে জয়েন করলেও আমাদেরকে এসাইনমেন্ট না দিয়ে , কোনঠাসা করে বসিয়ে রেখে . নানা ষড়যন্ত্র করে অযোগ্য প্রমান করার চেষ্টা করা হতো। শাকিল ও তার সিন্ডিকেট বাহিনী সবসময় আমাদেরকে কোনঠাসা করে প্রতিনিয়ত মানসিক হয়রানির মধ্যে রাখতো। কাজ করার সুযোগ না দিয়ে বরং গুজব রটাতো আমরা কাজ পারিনা বা আগে কোথাও কাজ করিনি ইত্যাদি । এসবের কারন হলো আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে । কারন একুশের মালিকপক্ষকে দিনের পর দিন কোনঠাসা করে রেখেছিল শাকিল বাহিনী । সমস্যার শুরু সেখানেই । আগে থেকেই শাকিলপক্ষ আর মালিকপক্ষের মধ্যে চলছিল ঠান্ডা লড়াই । সেখানে জয়েন করার পরে আমরা হয়ে গেলাম বলির পাঠা।
কোন উপায় না দেখে শাকিল বাহিনীর এই অত্যাচার অনেকে মুখ বুজে সহ্য করতে পারলে ও আমি প্রতিবাদ করে বিষয়টি সামনে আনি। সেকারনে শাকিল ফারজানার সিন্ডিকেট গ্র্পের ক্ষোভটা আমার উপরেই বেশী ছিল। ষড়যন্ত্র করে নিজেদের আধিপত্য খাটিয়ে শাকিল ফারজানা আর তাদের আরেক সাগরেদ নজরুল কবীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে আমার সদস্যপদ ও বাতিল করে দেন । কারন জানতে সেসময়ে ডিআরইউ সভাপতি শামীম আহমেদ ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন নজরুল কবীর , শাকিল , ফারজানা রুপার সিন্ডিকেট চক্রের বাইরে ডিআরইউতে তখন কারো কিছু করার ছিলনা । সেসময়ে যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ মামুনুর রশীদ ভাইয়ের সাথে আরো অনেকেই বসে ছিলেন ডিআরইউ সভাপতি শামীম ভাইয়ের কক্ষে।
সিডনীতে বসবাস করছি দশবছর হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের মত সৎ ,সাহসী, অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া সাংবাদিকের জন্য বাংলাদেশ নয় । এখন বাংলাদেশ হলো তেলবাজ, দুর্নীতিগ্রস্থ, সুবিধাদীদের জন্য টাকা কামানোর নিরাপদ স্থান । সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সে সবদিন গুলো কখনোই সহজ ছিলনা । তারপর ও এই ভেবে ভালো লাগে যে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করতে শিখেনি আমি । আমি বিশ্বাস করি মেধা যোগ্যতা থাকলে কাজের অভাব হয়না।
তবে আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে এটুকু বলব , বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুধু মেধা যোগ্যতা দিয়ে নারীদের সংবাদ মিডিয়ায় টিকে থাকা খুবই কঠিন । তবে যাদের মেধা যোগ্যতা কোনটাই নেই তারা আবার সহজেই চাকুরী পাচ্ছেন বা চাকুরীটী ধরে রাখতে পেরেছেন বেশীরভাগই নিউজ বসদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক মেনটেন করে। এর ব্যতিক্রম ও আছে তবে খুবই কম। যারা এটা পারছেনা তাদের অনেকে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন ।
যাহোক, ফিরে আসি আগের প্রসংগে । এই শাকিল আহমেদের সিন্ডিকেট ও একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে চ্যানেলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনতে সে সময়ে একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ও ম্যানেজমেন্টপক্ষ শাকিল আহমেদকে তার সিন্ডিকেট গ্রুপ সহ একপর্যায়ে বের করে দিতে বাধ্য হন । এরপর নানা চ্যানেল ঘুরে দলবল নিয়ে ৭১ টিভিতে যোগ দেন শাকিল আহমেদ । সেখানে ও তার ষড়যন্ত্রে ভিকটিম হয়ে বেশকজন নারী সাংবাদিক চাকুরী ছাডতে বাধ্য হয়েছেন। যাদের মধ্যে আছেন শামীমা দোলা, ফারজানা আফরিনসহ অনেকেই ।
সময় বদলেছে কিন্ত শাকিল আহমেদের বাজে স্বভাব, নোংরামী একটু ও বদলায়নি। চাকুরীতে টিকে থাকতে হলে নারীদেরকে তার সাথে হোটেলে যেতে হবে – এটাই তার শর্ত । যখন যাকে তিনি চাইবেন তাকেই যেতে হবে হোটেলে তার সাথে। নারীদেরকে স্রেফ ভোগের পন্য মনে করেন তিনি। নারীর মেধা যোগ্যতার কোন মুল্য নেই ৭১ এর এই নিউজ বসের কাছে। অথচ ৭১ টিভি নারীর অধিকার নিয়ে রাত দিন গলাবাজি করতেই থাকে।
আপনাদের মনে থাকার কথা, ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন ৭১ টিভির টকশোতে এসে মাসুদা ভাট্টির এক উদ্দেশ্যমুলক প্রশ্নের উত্তরে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, “আমি আপনাকে চরিত্রহীন মনে করতে চাই” তা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ১০১ নারী। একাধিক সেমিনার ও টকশো হয়েছিল। এখন সেই সকল নারীরা কোথায়? টকশো কোথায়? সেমিনার কোথায়? নাকি ডাক্তার তৃনা নারী নন?
৭১ টিভির ধর্ষন মামলার আসামী শাকিলের স্ত্রী ফারজানা রুপার নেতৃত্বে সেসময়ে নারীরাদীদের তীব্র আন্দোলনের ফলে ব্যারিস্টার সাহেবকে জেল ও খাটতে হয়েছিল। আর এখন ফারজানা রুপা ও তার অধীনে পরিচালিত নারীবাদী আপা ভাইয়ারা পুরাই হাইবারনেশনে আছেন । আসলে বাংলাদেশের তথাকথিত নারীবাদীরা নারীর অধিকার নিয়ে যেসব আন্দোলন করে এসেছেন তার পুরাটাই ব্যর্থ করে মুখে চুনকালি লেপ্টে দিয়েছে এই এক শাকিল আহমেদ ।