ভারতে করোনার তান্ডব, মানুষের ভ্যাকসিনে অনীহা
ভারতে একদিকে যেমন বাড়ছে ফের করোনার থাবা ঠিক অন্যদিকে দেশটিতে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা। এতে দেশটি কি ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বাংলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো?
ভারতে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ এসেই পড়েছে বলা যায়। সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও ক্রমশ বাড়ছে সংক্রমণ। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাজ্যের করোনা সংক্রমণ দুই হাজার পার করেছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ কলকাতায়। পরিসংখ্যান যাই বলুক, শহর ও জেলার পথঘাটে এই আশু বিপদের কোনো লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যান্য সাধারণ সময়ের মতো গণপরিবহণে বিপুল ভিড়। বলা যেতেই পারে, ৯০ শতাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ সবের জেরে সংক্রমণ কি আবার লাগামছাড়া হয়ে পড়বে। আবার কি হাসপাতালে ভিড় বাড়বে রোগীর?
করোনার ভবিষ্যৎ সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ধরা হয়েছিল গণটিকাকরণ। কিন্তু এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ এগিয়ে না আসায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে পৌনে চার কোটি মানুষ করোনার প্রথম টিকা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় টিকা নেননি ৬০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় টিকা না নেওয়ার ফলে তাদের টিকাকরণ কার্যত অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ কোভিড থেকে তারা সুরক্ষিত নন। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রেও ছবিটা আশাব্যঞ্জক নয়।
গত জানুয়ারি মাসে ৬০ বছরের বেশি বয়েসি প্রবীণ নাগরিকদের বুস্টার বা প্রিকশন টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের মধ্যে ২৩ লক্ষ এখনো বুস্টার ডোজ নেননি বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। কম বয়েসিদের মধ্যেও বুস্টার নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে টিকাকরণের মাধ্যমে কোভিডের সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে অনেকটাই ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে। এর সঙ্গে কোভিড বিধি মানার ক্ষেত্রে অসচেতনতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
কোভিডের প্রথম তিনটি ঢেউয়ে অতিমারির তীব্রতা যতটা ছিল, তা অনেকটাই কমেছে। শুরুর দিকে হাসপাতালে ঠাঁই ছিল না। অভাব ছিল অক্সিজেন-সহ অন্যান্য জীবনদায়ী স্বাস্থ্য সরঞ্জামের। ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও এজন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়েছে কম। তবু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অতিমারি যাতে ভয়াবহ আকার নিতে না পারে, সেজন্য
টিকাকরণ জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মাস্ক পরা ও নিয়মিত হাত ধোয়ার পাশাপাশি সঠিক সময় টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে ভবিষ্যতে করোনা আক্রান্ত হলে তা শরীর প্রতিরোধ করতে পারবে। একটা বড় অংশের মানুষ টিকা না নিলে অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রোধ করা যাবে না।”
টিকা নেওয়ার অনীহা দূর করতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর উদ্যোগী হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য দল তৈরি করা হয়েছে। এই দলগুলি সেই বাড়িতে যাচ্ছে, যেখানে সদস্যদের টিকা বাকি রয়েছে।
কেন টিকা নিতে চাইছেন না বা টিকা নিলে কী সুবিধা, সেই সংক্রান্ত বিষয় ব্যাখ্যা করছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় সরকার আরো বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে বুধবার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার নয় মাস পর বুস্টার বা প্রিকশন ডোজ নেওয়া যেত। এই সময়সীমা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পর ২৬ সপ্তাহ কেটে গেলেই বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে।
এই পদক্ষেপের ফলে টিকাকরণের ক্ষেত্রে গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের মতে, এক্ষেত্রে বেশি জরুরি বিনামূল্যে টিকাকরণ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম-এর সদস্য ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সকলকে টিকা নিখরচায় দেওয়া না গেলে গণটিকাকরণ সম্ভব হবে না। টিকা নিতে যদি টাকা খরচ করতে হয়, তা হলে একটা অংশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই সবচেয়ে জরুরি সবার জন্য ফ্রি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা।” সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কোভিডের দুটি টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে প্রিকশন ডোজ বিনামূল্যে মিলছে। তাও তো অনীহা দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কি খরচ শূন্যে নামিয়ে আনাই সমাধান? কোভিডে মাসের পর মাস বিপর্যয় চলার পরও কেন জনসচেতনতা সেভাবে গড়ে উঠল না?
এবিসিবি/এমআই