নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না সরকার: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। বেশকিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না। আমরা দেখছি, কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই অনুরোধ করব, প্রত্যাশা করব, আমরা আশা করি, সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। দেশে যে সংকট আছে সে সংকট থেকে মুক্ত করার জন্য দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, আজকে সবগুলো সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা উঠেছে। তাহলে কি আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করব? যতদিন সম্পূর্ণ সংস্কার না হবে ততদিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণ? তারা তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শহিদ আসাদের ৫৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুত্ফর রহমান, অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহিদ আসাদের ছোট ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কেন বলি, এই কথাটা আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা ১৫ বছর বঞ্চিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তারা তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার একটা সুযোগ পাবে। এ বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি টেনে তিনি বলেন,এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অন্য শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তখন জনগণের যে চাহিদা সেই চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ কথাটা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেটার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। আমি সেই কারণে বলেছি যে, বর্তমান যে সরকার আছেন সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।
ছাত্র অভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় কিন্তু আমরা সেই ধরনের একটা ব্যবস্থা দেখে এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে, দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে। মির্জা ফখরুল মনে করেন, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে এগুতে চায়। তবে নির্বাচন হওয়া যে দরকার সে বিষয়ে সবাই একমত। এ নির্বাচনটা শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, নির্বাচনটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটা পথ সৃষ্টি করা, একটা দরজা খোলা। সংস্কারগুলো সব করার পর নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাহলে কি আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করব বা যত দিন সংস্কার সম্পন্ন না হয় তত দিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণ, তারা তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা এখনো দেখছি, আমাদের আমলাতন্ত্র আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সব প্রশাসনে তারা একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এটা অতীত থেকেই এসেছে। সেটা পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়, কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই। সেই কারণে নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে তার যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট টু পিপলস থাকবে, সেই কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই তারা দায়বদ্ধ থাকবে। উনসত্তরে আসাদ, চব্বিশে আবু সাঈদ, একাত্তর ও তার আগ থেকে অসংখ্য মানুষের জীবনদানের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সেই জীবনদানকে অর্থবহ করতে হলে প্রয়োজন ন্যূনতম বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা যারা এক সঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপত্ আন্দোলন করছিলাম, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। এখন যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয় সেটাও সামনে আসতে পারে, ওটাকে সামনে রেখেই আমাদের এগুতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের এই ন্যূনতম যে সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক সেই সংস্কার শেষ করে আমাদের অতি দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়া উচিত এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার বেরিয়ে আসবে তাদের দায়িত্ব হবে এখানে পুরোপুরিভাবে সেই সংস্কারের কমিটমেন্টগুলো বাস্তবায়িত করা, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।
-ইত্তেফাক