Type to search

Lead Story জাতীয় শিক্ষা

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন: মাধ্যমিক শিক্ষায় পদে পদে দুর্নীতি

মাধ্যমিক শিক্ষায় নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে পদে পদে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন হয়। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে দিতে হয়। এ টাকা দিতে হয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।

‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে ২০ দফা সুপারিশও প্রদান করে সংস্থাটি।

টিআইবি বলছে, বর্তমানে শিক্ষক ও কর্মচারী এমপিওভুক্তির কাজে অন্তত চারটি স্থানে ‘হাদিয়া বা সম্মানি’ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমোদনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের পাশাপাশি নিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার ও অন্যান্য একাডেমিক সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে, বিভিন্ন পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সাড়ে ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন হয়। যা প্রচলিত অর্থে ঘুষ। এই ঘুষ নেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি। এছাড়া এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত সহকারী শিক্ষকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করাতেই তারা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ, সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেন তারা। এছাড়া শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় দিতে হয় ঘুষ। এই ঘুষ নেন মধ্যস্বত্বভোগী/বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তিন বছর পর পর বদলির বিধান থাকলেও তা নিয়মিত করা হয় না। কেউ ঢাকায় বা বিভাগীয় শহরে থাকার জন্য আবার কেউ প্রাইভেট বা কোচিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে ঢাকায় বা যেখানে এর সুবিধা রয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করছে।

প্রতিবেদনে শিক্ষার নানামুখী সমস্যার চিত্রও তুলে ধরে বলা হয়, মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাত পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের মধ্যে ১:৩০-এ উন্নীত করার কথা বলা হলেও, এখনো তা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। পদমর্যাদা ও স্কেল উপেক্ষা করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া ১ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। অবসর ভাতা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের এককালীন অবসর ভাতা পেতেও তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; এমনকি তাদের অবসর ভাতা পাওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখও জানানো হয় না।

উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা প্রতি মাসে ১৫টি এবং আঞ্চলিক উপ-পরিচালকরা প্রতি মাসে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিদর্শনের কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা করা হয় না।

২০ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে টিআইবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; মাঠ পর্যায়ে সরাসরি রাজস্ব খাতের আওতাভুক্ত সমন্বিত জনবল কাঠামো তৈরি করা; অনলাইনে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রাক্তন ম্যানেজার তাসলিমা আক্তার হেনা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট ৩২৫ জন মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মাউশির বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয়, ১৮টি উপজেলার ৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে তথ্য সংগ্রহ করে সুশাসনের নানা নির্দেশকের আলোকে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সৌজন্যে- ইত্তেফাক

এবিসিবি/এমআই

Translate »