কোভিড-১৯ টেস্টের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেন প্রকাশ

করোনাভাইরাস টেস্টের দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন খুলনার সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমার দাশ।

সিভিল সার্জনের তদন্ত রিপোর্টে সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে খুলনায়।

এত বড় অংকের টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করার পর অবশেষে পালিয়ে গেছে প্রকাশ কুমার। খুলনা সদর থানায় এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মামলার প্রস্তুতি করছেন।

জানা যায়, গত বছরের ২ জুলাই থেকে সদর হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্টের কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রাথমিকভাবে সাধারণ মানুষদের ৩’শ ও ৫’শ টাকা এবং বিদেশগামীদের সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করোনা টেস্টের জন্য নেওয়া হত। এসব টেস্টের টাকা সংগ্রহ করে চালানের মাধ্যমে সিভিল সার্জন অফিসে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশের। সেই মোতাবেক প্রকাশ প্রতিদিনই চালানের মাধ্যমে করোনা টেস্টের টাকা জমা দিয়ে আসছিল। কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার সাথে টেস্টের সামঞ্জস্য হওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয় সিভিল সার্জন অফিসের।

এর আগের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ লিখিতভাবে প্রকাশের কাছে করোনা টেস্টের টাকার হিসাব চাইলে প্রকাশ সেটা দেয়নি। এরপর বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ গত বছরে খুলনায় যোগদানের পর থেকে প্রকাশের কাছে হিসাব চেয়ে কয়েক দফা লিখিত আকারে চাইলেও গুরুত্ব দেয়নি প্রকাশ কুমার।  প্রায় ৫/৬টি চিঠি লিখিত আকারে প্রকাশ কুমার দাসকে দেওয়ার পর গত ২৬ জুলাই সে হিসাব দেওয়ার জন্য ১মাস সময় চেয়ে উত্তর দেন। কিন্তু এতে রাজি না হয়ে সিভিল সার্জন ১৫ দিনের  মধ্যেই হিসাব দিতে বলেন তাকে। কিন্তু তাতে গড়িমসি শুরু করে প্রকাশ। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জন নিজেকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির যাচাই বাছাই শেষে কোভিড টেস্টের দুই কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার গড়মিল মেলে। এরপর প্রকাশ কুমারকে এই টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য বলা হলে সে টাকা দিতেও স্বীকার হয়। তবে টাকা পরিশোধের জন্য সময় দাবি করেন তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, প্রকাশ কুমারকে কোন সময় না দিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর শোকজ করা হয়। পরবর্তীতে প্রকাশ কুমার গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার অফিসের কর্মচারীদের নিয়ে হিসাব পুণরায় হিসাব যাচাই বাছাই করা শুরু করেন।

দুপুরের দিকে প্রকাশ তার সহকর্মীদের জানায়, তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মারা গেছে। সে এই বলে অফিস ত্যাগ করে। এখনও তার সন্ধান মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশের সাথে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই।

প্রকাশ যশোরের বাঘারপাড়া গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে। সে নগরীর মুজগুন্নি এলাকায় বসবাস করত। তার স্ত্রী একজন নার্স।

সিভিল সার্জন আরও জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নিকট পাঠানো হয়েছে। প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।

এবিসিবি/এমআই