Type to search

Lead Story রাজনীতি

আবারও ধারাবাহিক আন্দোলনে বিএনপি

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন আবারও চাঙ্গা করতে চাচ্ছে বিএনপি। আপাতত গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের মাঠ তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও ক্রমান্বয়ে ‘গতি’ বাড়ানোর পথেই হাঁটছে দলটি। আগামী নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের ‘ফসল’ ঘরে তুলতে সব আয়োজন সম্পন্ন করছেন দলের হাইকমান্ড। লক্ষ্য অর্জনে আন্দোলনমুখী করা হচ্ছে পুরো দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে। পাশাপাশি সমমনা ৩৭ দলের বাইরে অন্যান্য দলকেও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার কাজ চলছে। খুব শিগগির রাজপথের আন্দোলন সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি দলটির নীতিনির্ধারক নেতাদের।

বিএনপি নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দলটি। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করা হবে। একই দাবিতে শনিবার সব মহানগর ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের ‘এক দফা’র যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাল শুক্রবার ঢাকাসহ সব মহানগরীতে গণমিছিলের কর্মসূচি পালিত হবে। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচিকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে সব কাজ করছে। ন্যূনতম অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিচ্ছে। দেশে কোনো ভোটের পরিবেশ নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে তাদের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে কারও জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। আন্দোলনে বিজয়ী না হতে পারলে দেশ ৫০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনে পড়বে।

দলটির নেতারা জানান, ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে কঠোর অবস্থানে বিএনপি হাইকমান্ড। মনিটর করা হচ্ছে প্রত্যেক নেতাকর্মীকে। কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। এমনটাই বলা হয়েছে দায়িত্বশীল নেতাদের। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। সামান্যতম গাফিলতিও সহ্য করা হবে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির পর দলের এমন কঠোর অবস্থান আরও জোরদার করা হয়েছে। ফলে দলের ঢিলেঢালা কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীর উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

বিএনপি নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে তারা নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। গত বছরের জুলাই থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত ১২ জুলাই থেকে এক দফা আন্দোলন শুরু করে বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা দল ও জোট। অবশ্য চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই হোঁচট খেতে হয়েছে দলকে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি তেমন সফল করতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়ে এবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। শোকের মাস আগস্টের শেষ দিনগুলোতে ধারাবাহিক ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন তারা। তবে আগামী মাসের শুরু থেকে আবারও মহাসমাবেশ, চলো চলো ঢাকা চলো, অবস্থান ও ঘেরাওয়ের মতো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির রোডম্যাপ নিয়ে এগোচ্ছে পুরো দল। সবকিছু ঠিক থাকলে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আন্দোলনের সফলতা দেখতে চান দলের হাইকমান্ড।

জানা গেছে, একদিকে আন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুত করা; অন্যদিকে মিত্র রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। সে জন্য সমমনা ৩৭ দলের বাইরে থাকা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করা হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড। যাতে এর মাধ্যমে সরকারের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করা যায়। একদিকে রাজপথের আন্দোলন, অন্যদিকে বহির্বিশ্বের চাপ। দুই দিকের চাপের মুখে সরকার খুব শিগগির দাবি মানতে বাধ্য হবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগত নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। বিশেষ করে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল দলটি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মী কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়ে মহাসমাবেশে এসেছিলেন। কিন্তু অবস্থান কর্মসূচি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত না হওয়ায় নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা আবারও প্রকাশ্যে আসে। সে কারণে আন্দোলন কৌশলে পরিবর্তন এনে অনেকটা ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করে দলটি। নিয়মমাফিক রাজপথে থাকার বাইরে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দলটি। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটি ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকাকে শক্তিশালী করতে সব উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।

সাংগঠনিক তৎপরতা ও আন্দোলন প্রস্তুতি
আন্দোলনকে জোরদার করতে সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগও নিয়েছে বিএনপি। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি দ্রুত ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও বিভিন্ন থানা ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে। যে কোনো সময় এসব কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের অন্য সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকেও সমন্বয় করার কাজ চলছে। নতুন গঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করার তাগাদা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর থানা কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। এখন দলের হাইকমান্ডের অনুমোদন অপেক্ষায় রয়েছে। অঙ্গ সংগঠনের বাইরে মূল দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলছে দ্রুতগতিতে। মহানগর কমিটি ছাড়াও বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ঢাকার প্রবেশমুখের অবস্থান কর্মসূচিতে অবহেলা করেছেন, তাদের সতর্ক করার পাশাপাশি ওইসব নেতার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রত্যেক সংগঠনের সাহসী নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করার কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। অবস্থান কর্মসূচিকে টার্গেট ধরে ওইদিন যারা সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামেও যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদেরও সামনের সারিতে আনা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন সমকালকে বলেন, তাদের হারানোর কিছু নেই। এখন বিএনপির অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতাকর্মী ঘরে থাকলেও মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার, গুম-খুন ও হত্যার শিকার হন। কবরে গিয়েও গায়েবি মামলা থেকে রেহাই পান না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তারা যে কোনো আন্দোলনে, যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »