আ.লীগ নিষিদ্ধ হবে নাকি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে- কী বলছেন ড. ইউনূস

ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার দল অওয়ামী লীগ। তবে পালানোর আগে গত ১৬ বছরে দেশে গুম, খুনসহ চালানো নানা অপরাধ ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। যেসবের বিচারের দায়িত্ব এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে।
শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনেক দাবি থেকেই দাবি তোলা হয়েছে। আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যানের দায় ছেড়ে দিয়েছেন জনগণের ওপর। আর সেটা হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে আওয়ামী লীগ। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রশ্নে দুটি ভিন্ন অবস্থানে রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে আসন্ন ডিসেম্বরে সম্ভাব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে সাধারণ জনগণের মাঝেও।
সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। যেখানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে এসেছে।
বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছেন। এটা নিয়ে আপনার অবস্থানটা কী?
প্রধান উপদেষ্টা: ওই যে ঐকমত্য। আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করবো।
বিবিসি বাংলা: এ বিষয়ে আপনার সরাসরি অবস্থান নেই বা আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা রাজনীতি করবে কিনা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না?
প্রধান উপদেষ্টা: আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিৎ, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তাতে সরকার প্রধানের সাথে রাষ্ট্রপতির একটা নিয়মিত যোগাযোগ থাকার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতির সাথে কি আপনার যোগাযোগ হয়?
প্রধান উপদেষ্টা: যখনই প্রয়োজন হয়। শুধু শুধু তো গিয়ে ওনার সময় নষ্ট করার দরকার নাই। যখনই দরকার হয়, আমি তো তার কাছে যাই।
বিবিসি বাংলা: এর আগে সাক্ষাৎকারে আপনি একটা কথা বলেছিলেন যে এক-এগারোর সময় আপনি যে একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো এবং আপনি বলেছিলেন যে আপনার রাজনীতিতে আসাটা ভুল হয়েছে। এখন আপনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। এখন আপনার কী মূল্যায়ন? এখানে আসা কি আপনার সঠিক হয়েছে নাকি এখনই বিচার করতে চান না?
প্রধান উপদেষ্টা: না, বিচার করবো। প্রথম কথা, আমি রাজনৈতিক দল গঠন করি নাই। গঠন করার কথা বলেছিলাম। এবং দশ সপ্তাহ যাবৎ এই কথা জারি ছিল। দশ সপ্তাহ পর আমি বলেছি- না, আমি রাজনীতিতে যাব না। আমি বলেছি যে পলিটিক্স ইজ নট মাই কাপ অফ টি। এবং ওটা ওখানেই সমাপ্ত, এরপর আমাকে রাজনীতির কাছে কেউ টানতে পারেনি। সবাই চেষ্টা করেছে দেশের নেতৃত্ব নেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। সবাই চেষ্টা করেছে। আমি ওটা চাই নাই। আমি বলেছি, ওই চ্যাপ্টার শেষ। এই দশ সপ্তাহ- দ্যাটস এনাফ। কাজেই ওইভাবেই আছি এখন। এখানে আমি রাজনীতিতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। রাজনীতি করিও না।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু এটা একটা রাজনৈতিক পদ, সরকার প্রধান…
প্রধান উপদেষ্টা: এটা টেকনিক্যালি হলে হবে। আমি তো এই পদে আসতেও চাই নাই। আমাকে অনুরোধ করেছে, বহুবারই করেছে। তারপর আমি শেষ পর্যন্ত সম্মত হয়েছি। সেটার দায়িত্ব নিয়েছি। রাজনৈতিক পদ যদি হয়ে থাকে, এটা বাই ডেফিনেশন। আমি রাজনীতি করি না।
বিবিসি বাংলা: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলাকে সময় দেয়ার জন্য।
প্রধান উপদেষ্টা: ধন্যবাদ আপনাকেও।
যুগান্তর