Type to search

Lead Story রাজনীতি

সুষ্ঠু নির্বাচনে দ্রুত গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তন দরকার: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা নিশ্চিত করতে চাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য কেবল তার জনগণই নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের জনগণ ভয়, নিপীড়ন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তামুক্ত একটি ভবিষ্যৎ চায়। সামনের পথ স্পষ্ট-একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে দ্রুত প্রত্যাবর্তন।

রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে এই ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিজ, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব এক টেবিলে বসে ইফতার করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল উলিয়াম মিলার ছাড়াও রাশিয়া, জাপান, কানাডা, সংযুক্ত আবর আমিরাত, নরওয়ে, সুইডেন, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকরাও ছিলেন এই আয়োজনে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইফতারে কূটনীতিকদের শুভেচ্ছা জানান। ইফতার-পূর্ব বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গত ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে যারা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ও বিভিন্ন ধরনের আঘাত পেয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আশা করি বিশ্বব্যাপী বন্ধু ও অংশীদাররা আমাদের সম্মিলিত বিকাশের জন্য ‘অ-হস্তক্ষেপ’, ‘সার্বভৌমত্ব’ এবং ‘বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান’-এর বিশ্বব্যাপী নিয়মগুলোকে সম্মান করবে। গণতন্ত্র ও উদার বাণিজ্য অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমাদের অঞ্চলের সম্মিলিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই। আগামী দিনে আরও বেশি করে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য উন্মুখ।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান আসলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ছিল। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়নি; বরং এটি ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের অংশ। বিএনপি ও অন্য গণতন্ত্রপন্থি দলগুলো এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই গণ-অভ্যুত্থান পুরো জাতির সম্মিলিত স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি যৌথ স্থিতিস্থাপকতার বিজয় ও বাংলাদেশি জনগণের অদম্য চেতনার প্রমাণ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যে, জুলাই-আগস্টের দমন-পীড়নের সময় ফ্যাসিস্ট শাসনের হাতে নারী ও ১১৮ শিশুসহ প্রায় ১,৪০০ জন নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপির কমপক্ষে ৫২৩ জন কর্মী তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়া গত দেড় দশকে হাজার হাজার বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার জোরপূর্বক গুম ও ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন। ৬০ লাখেরও বেশি বিএনপি কর্মীকে মিথ্যা ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

ইফতারের আগে বিএনপি মহাসচিব কূটনীতিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ইফতারে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলে এলাহী আকবর, আবদুল কাইয়ুম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, জহির উদ্দিন স্বপন, তানভীরুল ইসলাম, এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শামা ওবায়েদ, মীর হেলাল, মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মাহমুদা হাবিবা, ফারজানা শারমিন পুতুল, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।

এছাড়া ছিলেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, শফিক রেহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বদিউল আলম মজুমদার, কামাল আহমেদ, বোরহান উদ্দিন খান, তোফায়েল আহমেদ, শহীদ উজ জামান, জন রোজারিও, সম্পাদকদের মধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, ডেইলি সানের সম্পাদক রেজাউল করীম লোটাস প্রমুখ। ইফতার ও মাগরিবের নামাজ শেষে কূটনীতিকরা নৈশভোজেও অংশ নেন।

-যুগান্তর

Translate »