গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে এখন তা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে আটকের পর আদালতে না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে বিএনপি দাবি করেছে।
এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহিরউদ্দিন স্বপন, আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, রশিদুজ্জমান মিল্লাত, সুলতান সালাউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল হক, নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।
জামায়াতের গ্রেপ্তার হয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, মিয়া গোলাম পরওয়ার, মোবারক হোসাইন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান (পার্থ), জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র এহসানুল হুদা, দন্ত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন।
এ পর্যন্ত বিএনপির প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ শিক্ষার্থীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। এখন ব্লক রেইড দিয়ে দলীয় নেতা–কর্মী ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
নুরুল হককে নির্যাতনের অভিযোগ
বনানীর সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানির সময় আইনজীবীরা আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, রিমান্ডে নিয়ে নুরুলকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে নুরুল হকের স্ত্রী মারিয়া আক্তার সাংবাদিকদের কাছে একই অভিযোগ করেন।
গ্রেপ্তার অভিযান ও ‘ব্লক রেইডের’ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ‘ব্লক রেইড’ চলছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সহযোগী ফোর্স হিসেবে মাঠে আছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। অভিযানের সময় হেলিকপ্টারের ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযানে সহযোগিতার জন্য র্যাব হেলিকপ্টার উড়িয়েছে।
চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। ১৬ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের দুজন, সিটি কলেজের একজন, চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ১৪ জন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার ১৩ জন রয়েছেন।
অনেকের নাম মামলার এজাহারে না থাকলেও সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে পুলিশ বলছে, ফুটেজ ও বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বজনদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ২৯টি মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আরও ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম আলো