সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে সরকার

সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটিয়ে একে বিএনপি দমনে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার এক আলোচনাসভায় বিএনপি মহাসচিব এমন অভিযোগ করে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা বিনষ্ট করছে, তারা অত্যন্ত সুচতুরভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একটি দলকে স্থায়ীভাবে রাখার জন্য কাজ করছে।
এই পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় দেখবেন আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো সংগঠনের বা নেতৃবৃন্দ ওই সব ঘটনার সূত্রপাত করেছে। আজ পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। হবে না এই জন্য যে, অস্ত্রটা তাদের দরকার। এই অস্ত্র দিয়ে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে, ভোটের অধিকারের জন্য যারা লড়াই করছে, তাদেরকে তারা রুখে দিতে চায়, তাদেরকে তারা স্তব্ধ করতে চায়।
কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নানা ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেটার একটিই উদ্দেশ্য, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে-বর্তমানে যারা বেআইনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা এবং সামনে আবার নির্বাচনি নির্বাচনি খেলা আসছে, সেই খেলায় আবার জয়লাভ করা। এটা হচ্ছে মূল লক্ষ্য। ঘটনাগুলো ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি যে, সরকার এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে দায়ী। এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তারা। উদ্দেশ্য বিএনপিকে আবার জড়িয়ে দিয়ে জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার অধিকার আদায়ের জন্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, তার নিরাপত্তার দাবিতে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে সরিয়ে দেওয়া।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আজকের প্রেক্ষাপট, আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনাসভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। সংগঠনের আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য আজিজুল বারী হেলালের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুকোমল বড়ুয়া, রুহুল কবির রিজভী, গৌতম চক্রবর্তী, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, খন্দকার আবু আশফাক, আফরোজা আব্বাস, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকুতি কুমার মণ্ডল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নুরুল আমিন রোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল হক, রবিউল ইসলাম রবি, মশিউর রহমান বিপ্লব, একরামুল হক বিপ্লব, রমেশ দত্ত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শেখ শামীম, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, এই মুহূর্তে পরিবর্তন চাই। এই পরিবর্তন ঘটাতে হলে সবার আগে তরুণ ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই তাদের ভূমিকা পালন করবে। সেই রাজনৈতিক দলগুলোয় যাদের ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করবে তারা হচ্ছে তরুণ-যুবক।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজ যেরকম এই আলোচনাসভায় বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখছি, আমরা যদি একটু একসঙ্গে হই, যদি একবার একসঙ্গে হুংকার দিই, এই সরকার কিন্তু থাকবে না। এই সরকার এখন কাগুজে বাঘ। ছোট একটা টোকা দিলে তারা পড়ে যাবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই হামলা কোনো সাম্প্রদায়িক নয়। এটা রাজনৈতিক হামলা। সাম্প্রদায়িক বলে এটাকে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে ঘরের মধ্যে পুষে রাখে। যখন দরকার, তখন সেটাকে কাজে লাগায়, যখন যখন যেই কৌশল নিলে তাদের ক্ষমতাকে পোক্ত করার মতো ব্যাপার হয় সেটা করে।
গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ঘটনাপরমপরায় আমরা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছি। পুরো দেশটা একটা ভন্ডামির মধ্যে এসে গেছে প্রতিটা ক্ষেত্রে। আজ যদি সত্যজিত রায় বেঁচে থাকতেন তাহলে আরেকটা নতুন ঐতিহাসিক ছবি পেতাম, সেটা হলো হীরক রানির দেশ।- যুগান্তর
এবিসিবি/এমআই