সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে, পরাজয় বরণ করেছে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করে সমাবেশ পণ্ড করবে। কিন্তু সেটা করতে পারেনি। সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তারা চলে যাবে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন আপনারা থাকবেন। তাই আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়া পল্টনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
ঢাকা উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশ শুরুর আগেই সকাল থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে দলীয় অফিসের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তার এক পাশে নাইটিংগেল- ফকিরাপুলের মোড় বন্ধ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ করে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লণ্ডভণ্ড করেছে। সেখান থেকে সিনিয়র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কম্পিউটার ভেঙে ফেলেছে। যার লক্ষ্য ছিলো ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ পণ্ড করা। একইভাবে তারা বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পণ্ড করতে পরিবহন ধর্মঘট ও হামলা চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছিলো। তবুও আমাদের গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাতে গিয়ে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। ব্যাংক গুলো লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরও গরীব হচ্ছে। তারা ঠিকমতো খেতে পারে না।
তিনি বলেন, বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশ রায় দিয়ে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছে। দেশনায়ক তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। তেমনিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ এতো নির্যাতন করেও বিএনপি দুর্বল হয়নি। যার প্রমাণ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে, এই সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছি।
তিনি আরও বলেন, গোটা বিশ্বের নেতারা বলছেন-শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই এই সরকারকে পতন ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে। প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যদের বলবো- আপনারা ফোনে দলের কর্মী নন। আপানারা শপথ নিয়েছেন। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। মনে রাখবেন সরকারের অনৈতিক কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে র্যাব নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, পুলিশ বাহিনী আমাদের অফিসকে লণ্ডভণ্ড করেছে। মহাসচিব ও মির্জা আব্বাসকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেছে। কোনো কাজ হয়নি। এই সরকার নিজেরাই রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। লাখ লাখ মানুষ ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণ করে শান্তিপূর্ণভাবে সফল করেছে।
আওয়ামী লীগ লগিং বৈঠার রাজনীতি করে। তারা মানুষ হত্যা করে। কিন্তু এভাবে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে দেশের মানুষকে ঠেকানো যাবে না। এখনও বলছি শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিন। ইতিমধ্যেই বিএনপির সমাবেশে জনগণ রায় দিয়েছে যে, তারা আপনাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সভা সমাবেশে কাউকে টাকা দিয়ে আনা হয় না। আমাদের সমাবেশে যারা আসেন তারা দেশের জন্য ও মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর অন্য দলের সভায় যারা যান তাদেরকে বিরিয়ানি খাওয়া থেকে শুরু করে টাকা পয়সা ও টি শার্ট দিয়ে সমাবেশে নিয়ে আসেন।-সমকাল
এবিসিবি/এমআই