Type to search

Lead Story বাংলাদেশ স্বাস্থ্য

শীতজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালে

এ সময় টনসিল ইনফেকশন, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া বেশি হয়; এছাড়া শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়তে পারে :ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

মাঘের শুরুতে প্রকৃতিতে জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। এসময় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগী বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের তীব্রতায় এসময় জ্বরসহ শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সাইনাস, টনসিলাইটিস, এ্যাজমা, এলার্জি জনিত সমস্যা বেশি করে দেখা দিচ্ছে। শিশুরা সাধারণ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। রাজধানীর আশপাশ থেকেও  হাসপাতালে আসছে রোগীরা। প্রতিনিধিরা জানায় জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগী বেড়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সদর হাসপাতালগুলো চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর ঢাকার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শীতজনিত রোগে ভুগছে শিশুসহ বিভিন্ন পেশার বয়োবৃদ্ধরা। শ্যামলীর শিশু হাসপাতালে কথা হয়—দুই বছর বয়সী সাফওয়ান আরহামকে কোলে নিয়ে আছেন শিশুটির নানী। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে এসেছেন, ১১ দিন আগে। পি-১৩ নম্বর বেডে থাকা শিশুর নানী সেলি বেগম বলেন, জিরানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি, উন্নতি না হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসক। প্রথমত জ্বর ছিল, এখানে এসে জানতে পারি ওর নিউমোনিয়া হয়েছে, এখন একটু ভালোর দিকে। একই অবস্থা পি-১৪ নম্বর বেডে থাকা আয়মান ইসলাম সায়ানের। চারমাস বয়সী শিশুটি ঠাণ্ডা লাগে এবং মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়, শ্বাসকষ্ট হয়, এ অবস্থায় তারা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পি-৬ নম্বর বিছানায় আছে সাত মাস বয়সী ইহান। পাতলা পায়খানা, বমি ও প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে গেলে শিশুটিতে তারা হাসপাতালে আনেন। ৫ নম্বর বিছানায় বিবি ফাতামেকে নিয়ে আছেন তার মা মায়মুনা বেগম বলেন, আমরা থাকি নরসিংদিতে। আমরা যেখানে থাকি তার পাশেই সুতার ও কাপড়ের কারখানা। বিবি ফাতেমা বয়স ছয় বছর। এখন ডাক্তার বলছে, বাচ্চার ঢুসপুসে ইনফেকশন হইছে। এখনো জানিনা বাচ্চা বকটা সুস্থ হবে। রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত শিশু হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের তথ্যে জানা যায়, শিশু হাসপাতালের ঠাণ্ডাজনিত কারণে গত ১৩ ডিসেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন নিউমোনিয়া রোগী হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে এর মধ্যে ৮ জন ভর্তি হয়েছে। এবং এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এই রোগে চিকিৎসা নিয়েছে৪ হাজার ১৩০ জন। ঠাণ্ডাজনিত কারণে চিকিৎসা নেয় ৬০ জন শিশু, এ্যাজমা নিয়ে ৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে একজন ভর্তি হয় এবং ভর্তি হয়েছে ২১ জন। হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৭৭৮ শিশু। ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে আসে ২০ শিশু, এবছর এখন পর্যন্ত  ৭৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। এছাড়া ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসে ১৫০০ জন শিশু, এরমধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগে ১১৪২ জন , এময় ৯৫ জন এবং ডায়রিয়ায় নিয়ে আসে ২৮১ জন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, এই সময় শিশুদের ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। প্রয়োজন চাড়া ঘরের বাইরে শিশুদের না নেয়াই ভালো। ঠাণ্ডা খাবার খাবেনা, উষ পানিতে গোসল দিতে হবে এবং শিশুদের বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, শীতের এই সময়টাতে বাইরে ধুলাবালি বেশি থাকে ফলে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তারা দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়। ফলে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষদের এই সময়টাতে সতর্ক থাকতে হবে।

ইত্তেফাক
Translate »