লাইভ টেলিভিশনে ভারতীয় রাজনীতিক এবং তার ভাইকেে গুলি করে হত্যা
হত্যাকাণ্ডের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ
টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে থাকার সময় ভারতে এক বিতর্কিত রাজনীতিক এবং তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের সাবেক সাংসদ এবং সাবেক বিধায়ক আতিক আহমেদকে একটি মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর শনিবার রাতে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।
অপহরণের একটি মামলায় তিনি আগে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রয়াগরাজ শহরে (এলাহাবাদ) একটি মেডিকেল কলেজের কাছে দাঁড়িয়ে যখন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন খুব কাছ থেকে পিস্তল বের করে তার মাথায় গুলি করা হয়।
সেই সময় পাশে দাঁড়ানো তার ভাই আশরাফকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
যারা গুলি করেছিলেন, তারা সাংবাদিক সেজে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গুলি করার পরপরই তিনজন ব্যক্তি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ পুলিশি হেফাজতে থেকেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিলেন।
সেই সময় তাদের শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
সেসময় তাদের দুজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
কে এই আতিক আহমেদ?
কিছুদিন আগে থেকেই আতিক আহমেদ দাবি করে আসছিলেন যে, পুলিশের কারণে তার জীবন হুমকিতে রয়েছে।
কয়েকদিন আগে আতিক আহমেদের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আসাদও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
একটি হত্যা মামলায় আসাদ এবং আরেকজন ব্যক্তি পলাতক ছিলেন।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়, যাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলে পুলিশ বর্ণনা করেছে।
লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ছেলের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন কিনা?
ক্যামেরার সামনে তার সর্বশেষ বক্তব্য ছিল, ‘’তারা আমাদের নিয়ে নিয়ে যায়নি, সুতরাং আমরা যেতে পারিনি।‘’
ঠিক সেই সময় সাংবাদিক সেজে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে।
এরপর পাশে দাঁড়ানো তার ভাইকেও হত্যা করা হয়। গুলিতে একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন সাংবাদিকও আহত হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের সাবেক বিধায়ক এবং রাজ্যসভার সাবেক সদস্য আতিক আহমেদ এবং তার ভাইকে হত্যা এবং হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
অপহরণের একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
পুলিশের তরফ থেকেই তার জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে, এরকম একটি শুনানির আবেদন গত মাসেই নাকচ করে দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় রয়েছে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি।
বিরোধী দলগুলো সরকারের সমালোচনা করে বলছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত ছয় বছরে উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ১৮০ জনের বেশি ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।
বিরোধীরা বলছে, পুরো প্রদেশ জুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে যাচ্ছে, যদিও উত্তর প্রদেশের সরকার সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিবিসি।