রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ বছর পূর্তি আজ, বিচার হয়নি ভবন মালিকদের

৮ বছর পার হলেও এ ঘটনায় দায়ীদের এখনো বিচার হয়নি। ঐ সময়ে ভবনের মালিক রানাসহ কারখানার মালিকরা আটক হলেও একমাত্র রানা ছাড়া বাকিরা জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। জানা গেছে, আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়নি এখনো। ফলে এ মামলা কবে শেষ হবে, কিংবা দায়ীদের আদৌ বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শ্রমিক প্রতিনিধিদের।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বেশির ভাগই এখনো বেকার। শারীরিক ও মানসিক ট্রমার কারণে তারা কোনো কাজ দীর্ঘ সময় করতে পারেন না। ফলে কারখানা মালিকরা তাদের চাকরি দিতে উৎসাহ দেখান না। এসব শ্রমিকের পুনর্বাসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ৫৭ শতাংশই বেকার। যে ৪৩ শতাংশ কর্মসংস্থানে রয়েছেন, তাদেরও বেশির ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। আয়ও কম।
জরিপে উঠে এসেছে, করোনা পরিস্থিতি এসব শ্রমিকের আরও দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাদের ৯২ শতাংশই করোনাকালে সরকারের দেওয়া সহযোগিতা পাননি। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও ক্ষতিপূরণের কোনো জাতীয় মানদণ্ড এখনো তৈরি হয়নি। এ নিয়ে হতাশ শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
শ্রমিক নেতা ও ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাবেক মহাসচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিপূরণে জাতীয় মানদণ্ড এখন সময়ের দাবি। এছাড়া রানা প্লাজার ঘটনায় দায়ীদের বিচার আট বছরেও সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক কেন লাশ হলো, তার বিচার হবে না? এ বিচারকাজ দ্রুত করার দাবি জানান তিনি।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক অনুষ্ঠানেও বক্তারা এত দিনেও আলোচিত এ ঘটনার বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। আলোচিত এ ঘটনা কেন দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলো না, সে প্রশ্ন তোলেন।
রানা প্লাজা ধসে আহতদের পুনর্বাসনে ২০১৬ সালে টিআইডব্লিওএমসি নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর নেতৃত্বে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা ও অন্যান্য বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা ক্ষতিপূরণ তহবিলের অর্থ নিয়ে আহতদের চিকিত্সায় এটি গঠন করা হয়। আইএলও, সরকারের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রমিক প্রতিনিধি রয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। টিআইডব্লিওএমসির সমন্বয়ক কৃষ্ণ সেন বলেন, চিকিৎসার পাশাপাশি এ মুহূর্তে আহতদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু ট্রাস্ট ফান্ডের নীতিমালার কারণে তারা এ খাতে ব্যয় করতে পারছেন না। শ্রমিক নেতাদের দাবি, এই করোনাকালে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের স্বার্থে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে রানা প্লাজার আট বছর পূর্তি উপলক্ষে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনাস্থল, নিহতদের লাশ কবরস্থ করার স্থান জুরাইন কবরস্থান ও জাতীয় প্রেসক্লাবে কর্মসূচির আয়োজন করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের সন্তানরা মোমবাতি প্রজ্বালন করবে সকাল ১১টায়। তবে কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কোনো কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়নি। ইত্তেফাক