মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ভারতকে যে সংকটে ফেলতে পারে

অনলাইন ডেস্ক:
গত নয় বছর ধরে ভারতের ক্ষমতায় বিজেপি সরকার। এই সময়ের মধ্যে দেশটি এখন সবথেকে বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিজেপি নেতাদের আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে ক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব। অন্তত ১৬টি দেশের তরফ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ভারতের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবিও উঠেছে। যদিও বিজেপি ওই দুই নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করেছে তবুও ক্ষোভ কমছে না।
ভারতে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন নিয়ে এর আগেও বহুদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে এবারই প্রথম একসঙ্গে এমন চাপের মুখে পড়লো দেশটি। বেশ কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিকই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাদের আশঙ্কা, এই ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ভারতের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। তারা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মোদি সরকারকে বুঝতে হবে যে, দেশের মধ্যে এগুলো চলবে আর ইসলামিক দেশগুলোর সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক থাকবে তা হতে পারে না।
আরব নিউজকে ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক তালমিজ আহমদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি কীভাবে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় নিপীড়িত হয়েছে।
ভারতের একজন সিনিয়র সাংবাদিক জাভেদ আনসারি বলেন, মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের সবথেকে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তিনি আল্লাহ’র বাণী প্রচার করেছেন। তাই ভারতসহ বিশ্বের মুসলিমরা তাকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কিন্তু এর মানে এই না যে, কেউ চাইলেই নবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারে। মুসলিমরা মনে করেন, তাদের বিশ্বাস এবং অনুভূতিকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।
ভারত সরকার মুসলিম দেশগুলোর এই ক্ষোভ প্রশমন করার চেষ্টা না করলে তাতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের ৬ দেশের সঙ্গে ভারতের বাৎসরিক ব্যবসা প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের। ভারত যেসব দেশ থেকে তেল আমদানি করে সৌদি আরব সে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ভারতের যত গ্যাস প্রয়োজন তার ৪০ শতাংশ কাতার থেকে আমদানি করা হয়।
আবার ভারত যত তেল আমদানি করে তার এক তৃতীয়াংশ অর্থ মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিটেন্স হিসেবে ফেরত আসে। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পৃক্ত ভারত। মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় পণ্য বয়কট হলে চাপ বৃদ্ধি পাবে। তবে ভারত সবথেকে বড় সমস্যায় পড়বে যদি তাদের অভিবাসী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হয় কিংবা নতুন করে চাকরি প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় তাহলে। প্রায় ৮৫ লাখ ভারতীয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করছে। এসব দেশের সবথেকে বেশি বিদেশী শ্রমিক আসেই ভারত থেকে। তারা প্রতি বছর দেশে ৩৫ বিলিয়ন ডলার পাঠায়। দেশের প্রায় ৪ কোটি পরিবার এই আয়ের উপরে নির্ভরশীল।
তালমিজ আহমেদ ২০০০ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত সৌদি আরব, ওমান এবং আরব আমিরাতে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভারতের ভাল বন্ধু। আমি চাই, এসব দেশের নেতারা ভারতীয় কিছু কর্মকর্তাকে জানিয়ে দিক যে, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চললে তার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পড়বে। অপরদিকে ভারতেরও উচিৎ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে বুঝানো যে, কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়সংকরের প্রশংসা করেন। বলেন, ভারত ভাগ্যবান যে তার মতো অনেক বুদ্ধিমান এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কূটনীতিক পেয়েছে। তারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সম্মান পায়। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, জয়সংকর ভারতের ক্ষমতাসীন নেতাদের পরামর্শ দিতে পারবেন। আহমদ আরও বলেন, ভারতকে অবশ্যই তার পূর্বের আদর্শে ফিরে যেতে হবে। আবারও বহুত্ববাদ, বহুসংস্কৃতিবাদ, সংযম এবং উদারীকরণ ফিরিয়ে আনতে হবে এদেশে।