Type to search

Lead Story রাজনীতি

‘বন্ধুত্ব চাইলে আগে তিস্তার পানি দেন’ ভারতের উদ্দেশে ফখরুল

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে উত্তরের পাঁচ জেলায় জনতার ঢল নেমেছে। প্রথম দিনে সোমবার ১১ পয়েটে তিস্তা পাড়ের ১৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জড়ো হন লাখো মানুষ। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। তবে দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষই যোগ দেন প্রাণের দাবি জানাতে। ছিলেন নদীভাঙনের শিকার গৃহহীন, কৃষক, জেলে, নৌকার মাঝি সবাই।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় তিনি বলেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন। সীমানে্ত হত্যা বন্ধ করেন। আমাদের সঙ্গে বড় দাদা আর মাস্তানি আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের তিস্তার পানিসহ সব হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে বন্ধু হিসাবে দেখতে চাই। যে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তিস্তা এই অঞ্চলের জীবনরেখা নদী। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। ৩৬ দিনের সবার লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) ওই ভারতে পালিয়েছেন। একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে (হাসিনা) দিলি্লতে রাজার হালতে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তিনি আবার আওয়ামী লীগারদের বিভিন্ন হুকুম রাজি করেন।

বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে ভারতের কাছে বাংলাদেশের অনেক কিছু বেচে দিয়েছে কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি আওয়ামী লীগ। শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে তারা পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উত্পাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না। জীবন-জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। প্রত্যেক মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আর সরকারের উদ্দেশে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আপনারা যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেহেতু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন।

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদষ্টো বেবী নাজনীন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, ভুক্তভোগী নূর বখশ প্রমুখ।

এ ছাড়া এদিন কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট তিস্তাঘাটে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদষ্টো সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও তিস্তা বাঁচাও কমিটির জেলা সমন্বয়ক মোস্তাফিজার রহমান, বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও তিস্তা বাঁচাও কমিটির সদস্য সফিকুল ইসলাম বেবু বক্তৃতা করেন।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর ব্রিজ পয়েন্টে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বত্তৃদ্ধতা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির রংপুর মহানগর সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন প্রমুখ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টুটুল, সুন্দরগঞ্জ পেৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ উদ্দিন ভুয়া লিপন, সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মঈনুল হাসান সাদিক। নীলফামারীর ডিমলা তিস্তা ব্যারাজ পশ্চিমপাড় ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ পূর্বপাড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান, নীলফামারীর জেলা বিএনপির সভাপতি আ.ম.খ. আলমগীর প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

দুদিনের কর্মসূচিতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, নাটক পরিবেশনা করছে ‘তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন’ কমিটি। লালমনিরহাট সদর ছাড়াও আদিতমারীর মহিষখোঁচা, কালীগঞ্জের কাকিনা, হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ ও নীলফামারীর ডিমলার তিস্তা ব্যারাজ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সরিষাবাড়ি, উলিপুরের থেতরাই, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর সেতু এলাকায় এসব কর্মসূচি চলছে। সোমবার সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসব পয়েন্টে আসতে দেখা যায় নদীপাড়ের হাজারো মানুষকে। তিস্তা ব্যারাজ গিয়ে দেখা যায়, কর্মসূচিকে ঘিরে ২০টি বড় বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। এছাড়াও লালমনিরহাট রেলসেতু তিস্তা সড়ক সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ৪০টি প্যান্ডেলসহ খাবার রান্নার ঘর, অনুষ্ঠান মঞ্চ অন্যান্য নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আজ শেষ হবে এ কমসূচি।

-দৈনিক যুগান্তর

Translate »