Type to search

Lead Story রাজনীতি

পৌর নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বাড়ছে

পৌর নির্বাচন-এবিসিবি নিউজ-abcb news

এবিসিবি নিউজ ডেস্ক

সারা দেশে চলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এবারের পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে চার ধাপে। প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। আগামীকাল দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন হচ্ছে ৬০টি পৌরসভাতে। এ ছাড়া পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেই নির্বাচনে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। মঙ্গলবার সেখানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা গেছেন একজন, আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন। অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভায় ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই খুনের সাড়ে চার ঘণ্টা পর আলমগীর খান বাবু নামে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর ডুবন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ব্যুরো প্রধান, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই খুনের সাড়ে চার ঘণ্টা পর আলমগীর খান বাবু নামে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর ডুবন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কবিরপুর গ্রামের জালাল খানের ছেলে। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে করেছে জেলা নির্বাচন অফিসার। বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার বারইপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কুমার নদ থেকে বাবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার ও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত আলীর ভাই লিয়াকত হোসেন বল্টুকে খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শৈলকুপা পৌর নির্বাচনি পরিবেশ।

পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে কবিরপুর এলাকায় ভাইয়ের নির্বাচনি অফিসে বসেছিলেন বল্টু। এ সময় একদল সন্ত্রাসী বল্টুকে কুপিয়ে জখম করলে তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। আগেই অভিযোগ উঠেছে বুধবার রাতে নির্বাচনি ঘটনার জের ধরে কবিরপুর এলাকায় বল্টুকে কুপিয়ে জখম করে সদ্য লাশ পাওয়া আলমগীর খান বাবুর সমর্থকরা। রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই অভিযোগের তীর যার দিকে, সাড়ে চার ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি রহস্যজনক। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা মনে করলেও তারা এর পেছনে নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে। এক দিনে আওয়ামী সমর্থক দুই রাজনৈতিক কর্মীর লাশ আসন্ন পৌর নির্বাচনকে আরও সংঘাতময় ও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, লাশ ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যলয় থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনায় শৈলকুপা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে।

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচনের দুদিন আগে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনি অফিস ও নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যবহৃত একটি নৌকা বুধবার গভীর রাতে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারিয়া হক ও থানার ওসি মো. নুরুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের আমগ্রাম খাঁ বাড়ির মোড়ে অবস্থিত নির্বাচনি ক্যাম্পটি বুধবার রাত ১২টার পর কোনো এক সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া একই রাতে ৬নং ওয়ার্ডের ছোলনা গ্রামের চুন্নু বিশ্বাসের বাড়ি সংলগ্ন রেলগেটে রাখা প্রচারণায় ব্যবহৃত একটি নৌকাও দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আটক নেই। ঘটনার পর থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনের দুইদিন আগে ঘটা এ ধরনের নাশকতায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা : বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত ১২টার দিকে বরগুনা পৌরসভার স্টেডিয়াম সংলগ্ন আশ্রয়ণে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী বিদ্রোহী প্রার্থীর তিন কর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন- বাপ্পি (২৭), রাসেল (৩৫), ইশতি (২০)। আটকরা বরগুনা সদর থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের জামাতা আরিফ খান, পরাণ কৃষ্ণ মণ্ডলসহ কমপক্ষে ৩৫ জনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার তিন কর্মী ও সমর্থককে আটক করা হয়েছে। হামলায় কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- মো. জাহাঙ্গীর (৪০), আসলাম (৩০), হুমায়ুন (৩৭), নূপুর (২৯), হামিদা (৩৬)। এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়েই এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে বরগুনা থানা পুলিশ। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৌর এলাকার তালতলায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগে অংশ নিয়ে কাটাখালী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর বিপক্ষে দেওয়ায় এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সংঘর্ষকালে ৬ রাউন্ড পিস্তলের ফাঁকা গুলি এবং ৮-১০টি ককটেল বিস্ফোরণ হয় বলে দাবি করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে আহত উভয়পক্ষের প্রায় ১৩ জন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ জানান, মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ভাগ্নে তুষার (২৮) আহত হয়েছে। তাকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর দাবি, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় তিনি নিজেসহ তার কর্মী নাজমুল হক, রানা, বকুল, মজনু, খোকন, ফারুক, জিসান, হৃদয়, জাহিদ, রাজু ও আরিফুল আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই বাঘা থানায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে বর্তমান মেয়র ও বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীসহ প্রায় ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে।

বাঘা থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভার পাশ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর কয়েকজন সমর্থক মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই পরে হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর এক সমর্থকের বিরুদ্ধে আরেক মেয়র প্রার্থী নুরুল হক ভূইয়াকে জুতাপেটা করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে উপজেলা শহরের সড়কবাজারে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, জুতাপেটার ঘটনায় অভিযুক্ত সোহাগের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও আখাউড়া থানায় মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে। সূত্র জানায়, জুতাপেটা করার ঘটনায় অভিযুক্ত সোহাগ মোল্লার বিরুদ্ধে রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নুরুল হক ভূইয়া। সোহাগ আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের মোল্লার ছেলে। প্রসঙ্গত, নুরুল হক ভূইয়াও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ও একবার আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

Translate »