কারফিউ তুলে নেয়ার জন্য় ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা
বাংলাদেশে কোটা নিয়ে আন্দোলনে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর বিরোধী নেতাসহ ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে পুলিশ৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ৫৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”
আটক হওয়াদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী আহমেদ রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র৷ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বিএনপির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা আমিনুল হককেও আটক করা হয়েছে৷
জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মিয়া গোলাম পরওয়ারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাজধানীতে অশান্তির সময় অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আরো প্রায় এক হাজার আহত হয়েছেন৷ আহততদের মধ্যে ৬০ জনের অবস্থা গুরুতর৷
বিএনপির মুখপাত্র এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান অবশ্য তার দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের প্রসঙ্গে এএফপিকে বলেন, ”গত কয়েক দিনে দেশব্যাপী কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কূটনীতিকদের পাল্টা প্রশ্ন
কোটা আন্দোলন, বিক্ষোভ, সহিংসতা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের রোববার ব্রিফ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
এএফপি জানিয়েছে, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রাষ্ট্রদূতদের একটি ১৫ মিনিটের ভিডিও দেখান, যেখানে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঘটনার একতরফা উপস্থাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে পিটার হাস বলেছেন, ”আমি আশ্চর্য হয়েছি যে আপনি নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ফুটেজটি দেখাননি৷”
একই কূটনৈতিক সূত্র উদ্ধৃত করে এএফপি আরো জানিয়েছে, বিক্ষোভ দমন করার জন্য জাতিসংঘের লোগো চিহ্নিত সাঁজোয়া যান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ এ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধির করা প্রশ্নের জবাব দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ৷
কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি, আর সহিংসতার প্রতিবাদ ইউরোপে
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি সহিংসতার প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসীরা৷ ছবিঘরে থাকছে এরকম কিছু কর্মসূচির কথা৷
ছবি: Niaz Muhit
বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
‘‘বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা এবং হামলার প্রতিবাদে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে কয়েকশ বাংলাদেশি সমবেত হন’’ বলে জানিয়েছেন তাদের একজন মুহাম্মদ মুহিব্বুল হাসান৷ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি প্রদান করে হামলাকারীদের শাস্তি, কোটা সংস্কার এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Muhib Hasan
প্যারিসে মানববন্ধন
বাংলাদেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ন্যাশন’ চত্ত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা৷ ‘‘দুই শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সংহতি জানান,’’ বলে জানিয়েছেন প্যারিসে বসবাসরত সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ৷
নুরেমবার্গে প্রতিবাদ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রতিবাদে জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷
ড্রেসডেনে প্রতিবাদ
জার্মানির ড্রেসডেনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন একদল বাংলাদেশি৷ তাদের একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা বন্ধ করুন৷’’
নর্দান সাইপ্রাসে অবস্থান কর্মসূচি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত, সংঘর্ষের প্রতিবাদে নর্দান সাইপ্রাসেও বাংলাদেশিদের সমবেত হতে দেখা গিয়েছে৷ সেখানকার ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনে শহিদদের মাগফিরাত এবং আহত ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি৷ আমরা চাই ছাত্র হত্যা বন্ধ হোক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক৷’’
পোর্টসমাউথে প্রতিবাদ
যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষায় রাজনীতি নয়৷’’
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় যে প্রাণহানি হয়েছি তার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জার্মানির মাগডের্বুগের বাংলাদেশি কমিউনিটি৷
ব্রেমেনে একাত্মতা প্রকাশ
বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি৷’’
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির এসেন শহরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি মানববন্ধন করেন৷ মানববন্ধনে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, ‘‘সবাই একমত হোন যে এটা আর কোটা সংস্কার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সংস্কার দরকার৷ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্ভব নয় বলে [এখানে] সবাই শেখ হাসিনার পতন চান৷’’
বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷ সেখানে একজন বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো: কবির আহমেদ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের কাছ থেকে আর কি-ইবা পাওয়ার আছে৷ তারা তো সম্পূর্ণ দেশটাই পেয়েছে স্বাধীন হিসেবে৷’’
ছাত্র হত্যার অবসান দাবি মিউনিখে
জার্মানির মিউনিখ শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন৷ এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হোসাইন মোঃ তালিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা মিউনিখে বাংলাদেশে সংগঠিত সংঘাতের এবং ছাত্র হত্যার অবসান এবং বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছি৷’’
ব্রান্ডেনবুর্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
জার্মানির কটবুস শহরে ব্রান্ডেনবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত প্রায় ১০০ এর মতো শিক্ষার্থী চলমান কোটা সংস্কার ‘‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে’’ সমবেত হন৷ তাদের অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘সহিংসতা বন্ধ হোক৷’’
ম্যনশেনগ্লাডবাখে মানববন্ধন
জার্মানির ম্যনশেনগ্লাডবাখের হকশুলে নিধেরেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন৷
ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ তাদের দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন৷
আন্দোলনে বিরতি, ড. ইউনূসের বিবৃতি
সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের এক সমন্বয়ক৷
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এই ৪৮ ঘণ্টায় কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নিপীড়ণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে সরকারের কাছে৷
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনের এই সমন্বয়কারী৷
এদিকে, বাংলাদেশে ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন নোবেলবিজয়ী বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ”প্রতিবাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, সেই সহিংসতা থামাতে সামর্থ্যের সবটুকু করার জন্য আমি জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি৷”
তিনি আরো বলেছেন, ”যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত হতে হবে৷”