নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা – ইউরোপের কূটনৈতিক তৎপরতা কোন পথে যাচ্ছে?
বাংলাদেশে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক তৎপরতার পালে আরো জোরালো হাওয়া লেগেছে। ঈদের পর থেকে সে তৎপরতা আরো দৃশ্যমান হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতা শুরু হয়েছে আরো বেশ আগে থেকেই। পাশাপাশি ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও বসে নেই।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। এসব সফরে নির্বাচন ইস্যু যে প্রাধান্য পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ সরকারও সেটি অস্বীকার করছে না।
পশ্চিমা দেশগুলোর এমন তৎপরতায় বেশ নাখোশ হয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে খোলাখুলি-ভাবে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা যে তৎপরতা দেখাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরো একটি নগ্ন হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া।
আমেরিকার তৎরপতা
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসছেন বাইডেন প্রশাসনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক। এদের একজন হচ্ছেন উজরা জেয়া এবং অন্যজন হচ্ছেন ডোনাল্ড লু। উজরা জেয়া হচ্ছেন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। অন্যদিকে ডোনাল্ড লু হচ্ছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে ডেনাল্ড লু সেটির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়া ঈদের ছুটির পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপের ১২টি দেশের কূটনীতিকরা আলাদা বৈঠক করেছন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলটি শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আসছে না। তবে এই সফরে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ইলেকশনের জন্য আসছে সেটা আমার তথ্যমতে নাই কিছু। এখানে অনেকই ইস্যু আলোচনা হবে, তারমধ্যে ইলেকশন আসতে পারে,” বলেন মি. মোমেন।
এই সফরে মানবাধিকার, রোহিঙ্গা ইস্যু, শ্রম অধিকার এবং বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার উপর জোর দিচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সংলাপ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ইতিবাচক কোন মনোভাব দেখা যাচ্ছে না।
গত বুধবার ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে দেখা করেছেন। সেখানে ব্রিটেনের মন্ত্রী বলেছেন তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উপর সংলাপের জোর দিয়েছেন তিনি।
গত ১২ই জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে চিঠি দিয়েছেন। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিতে অবদান রাখার জন্য পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধানকে অনুরোধ করা হয় সে চিঠিতে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের কাছে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। সেখানে মি. বোরেল লিখেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না সেটি মূল্যায়ন করার জন্য তাদের একটি দল আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে। জোসেফ বোরেল চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন।
সে অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের এই সফর হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সফর নিয়ে অনেক আগে থেকেই কথাবার্তা চলছে। এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্ধারণ করবে তারা আগামী নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে কী না,” বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বিবিসি বাংলা