Type to search

Lead Story অপরাধ অর্থ ও বাণিজ্য

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো এবি ব্যাংক থেকে ২৭৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

জালিয়াতি করে এবি ব্যাংক লিমিটেডের ২৭৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মাহিন এন্টারপ্রাইজের এমডি আশিকুর রহমান লস্কর। এই অর্থ আত্মসাতের নথিসহ যাবতীয় প্রমাণ মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখায় এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের এ টাকা আত্মসাতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন এবি ব্যাংক চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার সাবেক ম্যানেজার মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী। চারটি পর্যায়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে মোট ২৭৩ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ, তৃতীয় পর্যায়ে ৮১ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ও চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ঘটনাটি অনুসন্ধান করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। অর্থ আত্মসাতের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্নিষ্টতা থাকলেও অর্থ পুরো অর্থ দেওয়া হয়েছে এবি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে।

প্রতারণা, অপরাধমূলক, বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হয়ে এবং অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে গত ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর মাহিন এন্টারপ্রাইজের এমডি আশিকুর রহমান লস্কর ও এবি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার সাবেক ম্যানেজার মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী পরস্পর যোগসাজশে ০৬৬৭১৩ এসবিএলসি ০১ নং স্ট্যান্ডবাই এলসি খোলেন। এরপর চট্টগ্রাম ইপিজেডে ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট শাখা থেকে এক কোটি ইউএস ডলার ফরেন ফাইন্যান্স হিসেবে ঋণ করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়।

স্ট্যান্ডবাই এলসির মাধ্যমে নতুন বৈদেশিক দায় সৃষ্টি করে এসডিবি স্ট্যান্ডবাই এলসির ১ কোটি ইউএস ডলার মূল্যের বৈদেশিক দায় মাহিন এন্টারপ্রাইজ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হয়নি। গত ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ওই এক কোটি ইউএস ডলার ফোর্সড ঋণ তৈরি করে ব্যাংকের ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা গোপনে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। ব্যাংকের রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা যায়, তারা মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২), দণ্ডবিধি-১৮৬০-এর ৪০৯/৪২০/৪৬২(ক)/ ৪৬২(খ)/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেবে দুদক।

দ্বিতীয় পর্যায়ে একই শাখা থেকে আরও ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। মাহিন এন্টারপ্রাইজের এমডি ও ব্যাংকের সাবেক ওই ম্যানেজার যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, গত ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ০৬৬৭১৩ এসবিএল ০২ নং স্ট্যান্ডবাই এলসির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের লন্ডন শাখা থেকে এক কোটি ইউএস ডলার বিদেশি অর্থ হিসেবে ঋণ করে অন্য ব্যাংকে গ্রাহকের আগের দায় সমন্বয় করা হয়। পরে নতুন বৈদেশিক দায় সৃষ্টি করে এসডিবি স্ট্যান্ডবাই এলসির এক কোটি ইউএস ডলার মূল্যের বৈদেশিক দায় মাহিন এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করা হয়। ফোর্সড ঋণ তৈরি করে আত্মসাৎ করা এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।জালিয়াতি করে তৃতীয় পর্যায়ে ব্যাংকের ৮১ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এই পর্যায়েও তারা যোগসাজশে গত ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি স্ট্যান্ডবাই ০৬৬৭১৪ এসবিএলসি ০১ নং এলসি স্থাপন করে লন্ডনের হাবিব এলাইড ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকে এক কোটি ইউএস ডলার বিদেশি অর্থ হিসেবে ঋণ করে আগের দায় সমন্বয় করেন। পরে এসডিবি স্ট্যান্ডবাই এলসির এই বৈদেশিক ঋণের দায় মাহিন এন্টারপ্রাইজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে এক কোটি ইউএস ডলার ফোর্সড ঋণ তৈরি করে ৮১ কোটি ৪ লাখ ৭৯
হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মাহিন এন্টারপ্রাইজের এমডি ও এবি ব্যাংকের সাবেক ওই ম্যানেজার চতুর্থ পর্যায়ে এবি ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। তারা গত ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্ট্যান্ডবাই ০৬৬৭১৫ এসবিএলসি ০১ নং এলসি খুলে লন্ডনের ইউনাইটেড ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ ইউএস ডলার বিদেশি অর্থ হিসেবে ঋণ করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়। পরে নতুন বৈদেশিক দায় সৃষ্টি করে এসডিবি খাতের ৫০ লাখ ইউএস ডলার মূল্যের বৈদেশিক দায় মাহিন এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে ফোর্সড ঋণ তৈরি করে ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »