Type to search

Lead Story জাতীয় বাংলাদেশ শিক্ষা

টিএসসিতে দিনরাত খাটছেন শিক্ষার্থীরা, গতকাল সংগ্রহ প্রায় দেড় কোটি টাকা

বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য আজ শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷

নগদ অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা গতকাল যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে তুলে দিয়েছেন, তা বহন করতে প্রায় ৫০টি ট্রাক লেগেছে৷ দিনভর ত্রাণ ও নগদ অর্থ সংগ্রহের পর রাতে প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী৷ পরে ট্রাকে করে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকায়৷ আজ সকাল ১০টা থেকে টিএসসির ফটকে আবারও ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হয়েছে চলবে রাত আটটা পর্যন্ত

সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে রাত আটটা পর্যন্ত৷ গতকাল শুক্রবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা  ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়েছে ৷

দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হওয়ার পর গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন৷ আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের আহ্বান জানান বাকের৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের জন্য ‘রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণ’ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়৷

এরপর টিএসসির প্রধান ফটকে বুথ স্থাপন করে বৃহস্পতিবার থেকে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হন৷ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, কেউ ভ্যানে করে, কেউ কেউ ছোট ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে আসেন৷ বুথে থাকা শিক্ষার্থীরা দাতার নাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে রাখেন খাতায়৷ পাশাপাশি অনেকে নগদ অর্থ দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান৷ সেই অনুদানের অঙ্কও শিক্ষার্থীরা খাতায় লিখে রাখেন৷ গাড়ি থেকে নামিয়ে  ত্রাণের পণ্যগুলো টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ায় জড়ো করেন ছাত্র-ছাত্রীরা৷ দিনভর পরিশ্রমের পর রাতে ত্রাণের প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন শিক্ষার্থীরা৷

ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা জমা পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগে৷ এ ছাড়া প্যাকেজিং শেষে রাতে পণ্যভর্তি কয়েকটি ট্রাক দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়৷ এরপর গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুরের পর টিএসসিতে ত্রাণ দিতে আসা মানুষের ঢল নামে৷ এদিন নগদ সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক লুৎফর রহমান৷ এ ছাড়া যে বিপুল ত্রাণসামগ্রী মানুষ তাঁদের হাতে তুলে দেন, তা বহন করতে প্রায় ৫০টি ট্রাক লেগেছে বলে প্রথম আলোকে জানান আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ত্রাণ হিসেবে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন, কেউ মুড়ি-চিড়া, কেউবা বিস্কুট, আবার কেউ খেজুরসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন শুকনো খাবার নিয়ে আসেন মানুষ৷  শিক্ষার্থী সুস্মিতা কর ও অর্থি দে গতকাল রাতে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহনাফ সাঈদ খান ও লুৎফর রহমানের হাতে বাচ্চাদের খাবার, কাপড়-চোপড়, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট এবং বিস্কুট ও ত্রাণ রাখার ৫০০টি ব্যাগ তুলে দেন।

জরুরি সংযোগেও বিপুল ত্রাণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগের পাশাপাশি বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করতে গতকাল টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল৷ ‘ভারতের পানি আগ্রাসনে আক্রান্তদের জন্য জরুরি সংযোগ’ শীর্ষক এই কনসার্টে বন্যায় আক্রান্তদের জন্য গণঅর্থ, পানি বিশুদ্ধকারী ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনা খাবার এবং স্যানেটারি প্যাড জোগাড় করা হয়৷

‘জরুরি সংযোগের’ আয়োজক মূলত বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা৷ গতকাল বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কনসার্ট চলে৷ গান শুনতে আসা মানুষদের অনেকেই ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ তুলে দেন কনসার্টের আয়োজকদের কাছে৷ ত্রাণসামগ্রী রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিচতলায়৷ অল্প কিছু ত্রাণ রাখা হয় টিএসসিসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে৷

জরুরি সংযোগে ৬ ঘণ্টায় ২১ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু৷ এর পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য প্রায় ২০ ট্রাক সমপরিমাণ ত্রাণসামগ্রী সংগৃহীত হয়েছে৷ প্যাকেজিং শেষে ত্রাণসামগ্রী দুর্গত এলাকায় পাঠানো হবে৷

এই দুই উদ্যোগের বাইরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন৷ কেউ কেউ ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছেন৷ কেউ বুথ বসিয়ে সংগ্রহ করছেন ত্রাণ ও নগদ অর্থ৷ বিভিন্ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগেও চলছে অর্থ সংগ্রহ৷ সবারই লক্ষ্য, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো৷

-প্রথম আলো

Translate »