জিম্বাবুয়েকে ১৫৫ রানে হারিয়ে সিরিজ শুরু টাইগারদের

রাজকীয়ভাবে ওয়ানডে সুপার লিগের ৩০ পয়েন্ট অর্জন করলো বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১৫৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে সাকিব-লিটনরা। বাংলাদেশের দেয়া ২৭৭ রানের জবাবে সাকিবের ঘূর্ণিতে ১২১ রানেই গুটিয়ে গেল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকলো সফরকারী বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করেছে বাংলাদেশ। ২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই আঘাত হেনেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে কোনো রান না করে সাজঘরে ফিরেছেন মারুমানি। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তিনি বোল্ড করেন ৯ রান করা মাধেভেরেকে।
সাইফউদ্দিন এবং তাসকিনের পর জিম্বাবুয়ের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। মেয়ার্সকে মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান এই তরুণ তুর্কি। এবার স্বাগতিক দলের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরকে ফেরালেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাসকিনের তালুবন্দী হয়ে ফেরার আগে ৩১ বলে ২৪ রান করেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
এরপর বল হাতে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন সাকিব। মূলত তার ঘূর্ণিতেই কাবু হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। টেইলরের পর একে একে ফেরান রায়ান বার্ল, মুজারাবানি, চাকাবা ও এনগাবারাকে। এই ম্যাচে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রেগিস চাকাভা ছাড়া ক্রিজে দাঁড়াতে পারেননি কেউই। ব্যক্তিগত ফিফটি পূর্ণ করার পর চাকাভা আউট হয়েছেন ৫৪ রানে। শেষ ছয়জন ব্যাটসম্যানের কেউই দশের ঘর স্পর্শ করতে পারননি। ৬ রানে বার্ল, ২ রানে মুজারাবানি আউট হন। আর রানের খাতায় খুলতে পারেননি লুক জংউই ও রিচার্ড এনগারাভা। ২ রানে অপরাজিত থাকেন টেন্ডাই চাতারা। আর চোট পাওয়ার কারণে ব্যাট করতেই নামেননি টিমসেন মারুমা।
সাকিবের পাঁচ ছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, শরিফুল ও সাইফউদ্দিন।
এর আগে হারারেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই তামিম ইকবালকে হারালো বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পেসার মুজারাবানির বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তামিম। প্রথম দুই ওভারে বাংলাদেশ কোন রান তুলতে পারেনি।
শূরু থেকেই রান তুলতে তাড়াহুড়া করছিলেন সাকিব। চার মেরে রানের খাতা খুললেও সাকিবের ব্যাটিংয়ে ছিল না কোন দায়িত্বশীলতার ছাপ। নবম ওভারে মুজারাবানিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৯ রানে সাজঘরে ফিরেছেন সাকিব। এরপর বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন মিঠুন। কিন্তু ১৯ রানেই শেষ তার লড়াই। চাতারার অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শট খেলে উইকেটের পেছনে মিঠুন ক্যাচ দেন। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ।
প্রস্তুতি ম্যাচে রান পেলেও প্রথম ওয়ানডের ম্যাচে হতাশ করলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ১৫ বলে ৫ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড নাগারাবার অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। তার আউটে বিপদ বাড়লো বাংলাদেশের। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে তখন টেনে তুলেছেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে গড়েছেন ৯৩ রানের জুটি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৩৩ রানে। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর পরেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন দাস। ৭৮ বলে ফিফটির পর থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। সেঞ্চুরি পূরণে এরপর খেলেন মাত্র ৩২ বল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় শতক। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি তিনি। এনগারাভার বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আউট হওয়ার পূর্বে ১১৪ বলে ৮টি চারের মারে করেছেন ১০২।
শেষদিকে অষ্টম উইকেট জুটিতে আফিফ-মিরাজ মিলে মাত্র ৪২ বলে ৫৮ রানের একটি কার্যকরী পার্টনারশিপ গড়েন। ৩৫ বলে ৪৫ রান তুলে আউট হন আফিফ। আর ২৫ বলে ২৬ রান করেন মিরাজ। এদিকে সাইফউদ্দিন ৮ রানে এবং শরিফুল শূন্যরানেই অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন লুক জংইউ। এছাড়া দুটি করে উইকেট পেয়েছেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভা।