Type to search

Lead Story রাজনীতি

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। পাড়া-মহল্লায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমে কাজ করে যেতে হবে। সংবিধান সমুন্নত রেখে সত্যিকারের নির্বাচন হতে হবে। অন্যথায় জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবিধানের ৫০ বছর এবং নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণফোরাম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। সত্যিকার অর্থে আমাদের মালিক হতে হলে অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। জনগণকে বঞ্চিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য তরুণ সমাজকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা যদি মনে করি ঘরে বসে থেকে অধিকার ভোগ করব এটা ভুল ধারণা।

তিনি বলেন, সংবিধানে দেখি জনগণ ক্ষমতার মালিক, এটা কথার কথা নয়। জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধানকে আরও কার্যকর করতে হবে। জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশ করতে হবে। এ জন্য বিষয়টি প্রচারমাধ্যমে আনতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার চায় না, সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সচেতন হোক।

সভায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, গণফোরাম নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ মাহমুদ বীর প্রতীক প্রমুখ।

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যদি আপনি (শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় আসতে না পারেন, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। কেউ কিছু আপনাকে বলবে না। আমি আপনার পাশে দাঁড়াব। এখনো সময় আছে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সংলাপ ডাকুন। গোঁয়ার্তুমি করে বিপদ ডেকে আনবেন না। এতে দেশ ও জাতি এবং আপনার ক্ষতি হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে সে সরকার দেশ ও জাতিকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। দেশে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, বাহাত্তর সালে সংবিধান যখন প্রণয়ন করা হয়, তখন আমাদের খুব বেশি অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ সে সময় অনেক দেশেরই সংবিধান ছিল না। সে তুলনায় আমাদের সংবিধান শ্রেষ্ঠ। আজ সংবিধান কাটাছেঁড়া করতে করতে হযবরল হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। সংবিধানে বলা আছে, জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। জাতির সামনে বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ না করতে পারলে সব ব্যর্থ হবে। দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালনা করার কথা ছিল। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল রাজিও ছিল। কিন্তু দুটি সংশোধনী তা বদলে দিয়েছে। সংবিধানের চতুর্থ এবং পঞ্চম সংশোধনী ছিল সবচেয়ে খারাপ।

গণফোরাম নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, দেশ কিভাবে চলবে, বিচারব্যবস্থা কিভাবে চলবে, রাষ্ট্রযন্ত্র কিভাবে চলবে, কে কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে সেগুলো সংবিধানে লেখা রয়েছে। কিন্তু সংবিধানে যা লিপিবদ্ধ আছে, সেভাবে কি দেশ চলছে? এ প্রশ্ন আজ ১৮ কোটি মানুষের।

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নয়। সংবিধানে অনেক কথা বলে পাতা ভরা হয়েছে। কিন্তু জাতিসত্তাগুলোর নাম লেখা হয়নি। আদিবাসীকে উপজাতি ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী হিসেবে উপহাস করা হয়েছে। দলীয় এমপিরা ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে কথা বলতে পারেন না। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করা হয়নি। গোষ্ঠী ও ব্যক্তি স্বার্থে সংশোধন করা হয়েছে। দেশকে আজ সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে ক্রমেই সংকুচিত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধান পুনর্বিন্যাস করা উচিত।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »