‘করের জাল বিছানো বাজেট’
বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পর শুক্রবার প্রকাশিত প্রায় সব পত্রিকার প্রথম পাতাজুড়েই রয়েছে বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা।
‘করের জাল বিছানো বাজেট’– এটি আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম।
এতে বলা হয়েছে, সাধ আছে সক্ষমতা কম বলে বেশি ধারকর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। গতকাল বাজেটে এমনই একটি ফিরিস্তি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন তিনি।
খবরে আরও বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী তার নিজের বাজেটটি রীতি মেনে ঘোষণা করলেন ঠিকই; তবে কৃচ্ছ্রসাধন আর সংকটের মধ্যেও আকারে খুব একটা ছাড় দেননি। আগেরটি থেকে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি খরচের পরিকল্পনা করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন নিজের বাজেটটি।
এছাড়াও একজন সাধারণ মানুষ যখন ১০ শতাংশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে মরিয়া, তখন অর্থমন্ত্রীর তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণার মধ্যেই ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে অসংখ্য নিত্যপণ্য, পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। পার্কে ভ্রমণ থেকে পানের জর্দা-জুস-বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অত্যবশ্যক পণ্য ও সেবায় করের খড়গ বসছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম ‘কালো টাকায় ঢালাও দায়মুক্তি’।
খবরটিতে বলা হয়েছে, আপনি যদি একজন সৎ করদাতা হোন তবে আপনার ওপর সর্বোচ্চ কর ধার্য আছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে।
কিন্তু কেউ যদি কালো টাকার মালিক হোন তবে তিনি ৩০ শতাংশ নয়, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তার যত খুশি কালো টাকা সাদা করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই টাকা কোথা থেকে ‘উপার্জন’ করেছেন আয়কর অফিসের কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।
এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতে সরকারের কোনো সংস্থা এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা তো দূরের কথা, ‘টুঁ’ শব্দটি পর্যন্ত করতে পারবে না। এভাবে ‘ইনডেমনিটি’ বা দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে কালো টাকার মালিকদের।
নজিরবিহীনভাবে ব্যক্তির পাশাপাশি কোম্পানিও এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন। কালো টাকার মালিক ব্যক্তি ও কোম্পানিকে অর্ধেক কর দিয়ে অর্থ সাদা করার এই ঢালাও সুযোগটি করে দেয়া হয়েছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে।
মূল্যস্ফীতি।
প্রায় দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় বাজারদরের চাপে গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে সাধারণ মানুষ।
নতুন অর্থমন্ত্রী বাজেটে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বললেও, এও স্বীকার করেছেন যে গত দুই বাজেটেও একই লক্ষ্যমাত্র পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য নতুন অর্থবছরে আগের মতোই বাজেট ঘাটতি কমানো ও কৃচ্ছ্রসাধনের দুই নীতিই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এতে মূল্যস্ফীতি কমার ভরসাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তবে তা কতটা কাজে দেবে প্রশ্ন তোলা হয়েছে খবরটিতে। কেননা বাজেটে বিনিয়োগ কমানো এবং অনুমান আর যদির ওপর যেভাবে ভরসা করা হয়েছে তাতে এই বাজেটটি অনেকটাই ইচ্ছাতালিকার বাজেট বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘আয় বাড়াতে কমছে ছাড়’ – দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান খবর।
খবরে বলা হয়েছে, আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে এবার বাজেটে ছাড় কমানোর প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা কার্যক্রমের পরিধি ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষার কথা বললেও শিল্প খাতে দেয়া সুবিধা কমিয়ে আনার কথা বলেছেন তিনি।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে রেয়াতি হারে ভ্যাট এবার কিছু খাতে তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের এই ছাড় কমে যাচ্ছে।
আগে শূন্য শুল্ক থাকলেও শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এছাড়াও অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে শূন্য শুল্ক সুবিধা থাকছে না। এসব অঞ্চলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
‘আশ্বাস ছাড়া কিছুই পেল না মধ্যবিত্ত’– যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর।
এতে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে কিছুই পেল না সাধারণ মানুষ। কাগজ-কলমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিলেও কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে কমানো হবে সে বিষয়ে বক্তৃতায় বিস্তারিত বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ভ্যাট-আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে ওইসব পণ্য ও সেবার দাম আরও বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও সংকুচিত করবে। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও চাকরির প্রয়োজনে অনেক মধ্যবিত্তের ফিটফাট হয়ে অফিস যেতে হয়। সেজন্য লন্ড্রিতে কাপড়চোপড় পরিষ্কার বা আয়রন করতে দেন। বাজেটে সেখানেও ভ্যাট হার ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কাপড় ধোয়া ও আয়রন খরচ বাড়বে।
অবসরে দেশের ভেতরে বিনোদন খোঁজে মধ্যবিত্ত। ঘুরতে যায় পার্কে। বাজেটে পার্কে প্রবেশ ও রাইডে চড়ার খরচ বাড়তে পারে, কারণ সেখানেও ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে।
অনেকে আবার দেশে-বিদেশে ঘুরতে পছন্দ করেন। এজন্য ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নেন। এই সাহায্য নিতেও বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে। কারণ ট্যুর অপারেটরদের ওপর নতুন ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
আগের অর্জনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে আগামীতে সরকার কী করতে চায় বা সংকট কীভাবে সামাল দেবে, সেদিকে খুব একটা যাননি বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘Main Challenge will be inflation control, revenue collection’ অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এটি ঢাকা ট্রিবিউনের প্রধান শিরোনাম।
এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কোভিড-১৯’র পর থেকে নেয়া সরকারের সংকোচনমূলক ও সতর্ক আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতাই দেখা গেছে।
মূল্যস্ফীতি কমানো, কর ও রাজস্ব বৃদ্ধি এবং কর অব্যাহতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের মাত্র কয়েকদিন আগে, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৯.৮৯%-এ পৌঁছেছে। গত দুই বছর ধরেই এই মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। তবে এই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও ৬.৭৫ শতাংশ অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় এক শতাংশ বেশি হবে বলে সরকার আশাবাদী।
এই বাজেট থেকে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নির্ধারন করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা কর আদায়কারীদের জন্য বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
বাজেট ছাড়াও শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর নিয়ে কালবেলার প্রথম পাতার খবর ‘দুদেশের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের পথ আরও সুগম হবে’।
এতে বলা হয়েছে, তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রোববার সন্ধ্যায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধান নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার দুই দিনের দিল্লি সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমবারের মতো এই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি। এই সফরে দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের চূড়ান্ত সূচি না হলেও অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
যেহেতু সফরটি শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে, তাই এ সফরে বিশেষ কিছু অর্জনের সম্ভাবনা নেই। তবে দুদেশের সরকারপ্রধানের মধ্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সুযোগ তৈরি হলে অবশ্যই কিছু না কিছু অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্বের পথ আরও সুগম হবে বলে খবরটিতে বলা হয়েছে।-বিবিসি
এবিসিবি/এমআই