Type to search

Lead Story রাজনীতি

এখনই পদত্যাগ করুন, নইলে পালাবার পথ পাবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শুধু র‌্যাবকে নয়, এই সরকারকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে হবে। বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রামে বিএনপি’র বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি’র আন্দোলনের মূল লক্ষ্য- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে, শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তারা এখন বলে, দুর্ভিক্ষ আসছে। আপনারা কম খান। বাতি কম জ্বালান, পানি কম খান। এইসব কথা বলে। আরে তাহলে আপনারা আছেন কেন? মানে মানে বিদায় হন। আমি আগেও বলেছি যে, ‘সেফ একজিট’ করেন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে নির্বাচন কমিশনকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপাররা মানেন না, সেই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কখনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলিতে ৫ নেতাকর্মী নিহত ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর পোলোগ্রাউন্ড ময়দানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরুর অনেক আগেই পুরো এলাকা কানায় কানায় ভরে ওঠে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। ২০১৪ সালে তারা বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে জয়ী করে সরকার গঠন করেছে। আমি শেখ মুজিবের ভাষায় বলতে চাই, গত কয়েক বছরে এই বাংলাদেশকে তারা শ্মশানে পরিণত করেছে। এই ভয়াবহ দানব আওয়ামী লীগের কারণে বাংলাদেশ শ্মশানে পরিণত হয়েছে। তারা সবকিছু লুট করে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। তারা ১০ টাকায় চাল দেবে বলেছিল। সেই চালের কেজি এখন ৭০ টাকা। এভাবে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুতের দামও নাকি আবার বাড়ানো হবে। কেন এভাবে দাম বাড়াতে হচ্ছে? কারণ তারা চুরি করে, লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করে। তারা কানাডা, লন্ডনে বাড়ি করে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানায়। আর আমার দেশের মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, খুব নাকি উন্নয়ন হচ্ছে। চট্টগ্রামে টানেল হচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু সেই সঙ্গে ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের জন্য এই সরকার কী করেছে। এই দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। দিনেদুপুরে ডাকাতি হয়। মা, মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। প্রতিদিন গুম, খুন হচ্ছে। এমন এক অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আমাদের র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি বলি শুধু র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। শেখ হাসিনার সরকারকেও নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। সরকারের নির্দেশে এইসব ঘটনা ঘটেছে। আজকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান পরিষ্কার করে বলেছেন, এখানে (বাংলাদেশে) গুম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। গুম হয়, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। তারা পরিষ্কার করে বলেছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা যে সাজা দিয়েছে এটি একটি রাজনৈতিক সাজা। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করেছে। তারা আবার নতুন করে মিথ্যা মামলা দেয়া শুরু করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে এই স্বৈরাচারী দানবীয় হাসিনা সরকারকে গদি থেকে নামিয়ে আনার জন্য।

তিনি বলেন, এই সরকার নির্বাচন করতে চায়। এজন্য তারা একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে যাকে ডিসি, এসপিরাই মানেন না। তারা বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে মানি না। আমরা শুধু শেখ হাসিনাকে মানি। এমন একটি নির্বাচন কমিশন নিয়ে এই দেশের মানুষ কি নির্বাচন করবে? এখানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আজ বন্দী। তিনি চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। এখন আমাদেরকে বলা হচ্ছে বেশি কথা বইলেন না। তাহলে আবার নাকি খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। খালেদা জিয়া আর বিএনপি জেলের ভয় পায় না। এরা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, র‌্যাব-পুলিশকে দলীয়করণ করেছে। এমনকি মিডিয়ার মালিকরাও দলের হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ দখল করে আর চাঁদাবাজি করে। সারা দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি করে আর তা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।

এই সরকারকে, হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তারা এখন বলে, দুর্ভিক্ষ আসছে। আপনারা কম খান। বাতি কম জ্বালান, পানি কম খান। এইসব কথা বলে। আরে তাহলে আপনারা আছেন কেন? মানে মানে বিদায় হন। আমি আগেও বলেছি যে, ‘সেফ একজিট’ করেন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না।

এই সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তাই অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিতে হবে। যে সরকার হবে সব দলকে নিয়ে একটি জনগণের সরকার। সব দল বলতে আমি বোঝাচ্ছি যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। সেই সরকার যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে আমরা এই দেশের যতগুলো সমস্যা আছে তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো। আমার চাল, ডাল, তেল, বিদ্যুতের দাম কমানোর চেষ্টা করবো। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবো। ওরা ২০/২৫ লাখ টাকা নিয়ে মানুষকে চাকরি দেয়। আওয়ামী লীগ নেতার ফোন লাগে। কিন্তু আমাদেরকে টাকা দিতে হবে না। আমাদের পরিষ্কার দাবি যত মিথ্যা মামলা আছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই দেশের মানুষ আর শেখ হাসিনাকে দেখতে চায় না। শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করুন। চট্টগ্রাম থেকে আজ যে আন্দোলনের সূচনা হলো সেই আন্দোলন আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেবো। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটাবো।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুরের মধ্যেই পোলোগ্রাউন্ড ময়দান ও এর আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সমাবেশ চলাকালে টাইগার পাস মোড়, কদমতলী মোড় ও সিআরবি মোড় এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সমাবেশের নিরাপত্তায় পোলোগ্রাউন্ড এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।-ইত্তেফাক

এবিসিবি/এমআই

Translate »