একটি খোলা চিঠি: “বিবেক বিক্রি করে দেইনি”
দেশ বিদেশে যে যেখানে আছেন শুভেচ্ছা ও সালাম। একটা বিষয় পরিস্কার করার জন্য আমার এ খোলা চিঠি। গত কদিন যাবত আপনারা অনেকে আমাকে ইনবক্স করে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জানতে চাচ্ছেন। কেউ আবার জানাচ্ছেন অনেক কিছু। আমি তাই সবারও উদ্দেশ্যে বলছি আমি যখন দেশে রিপোর্টার হিসেবে মাঠে কাজ করতাম কোন বিষয়ে নিউজ করার আগে প্রচুর সময় নিয়ে যতরকম সোর্স পেতাম প্রতিটা সোর্স যাচাই করে , উভয় পক্ষের সাথে মানে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিয়ে তারপর ভুয়া নাকি সঠিক সেটা যাচাই বাছাই করে তারপর নিউজটি ছাড়তাম।
কারন আপনার ছড়ানো একটা ভুল তথ্য একটা মানুষ, তথা একটা দেশ ও জাতিকে ভীষণ রকমের বিপদে ফেলতে পারে। দেশ ছেড়েছি সেতো অনেক বছর হলো। এখন আর দেশের কোন কর্মকাণ্ড, দেশের জাতীয় কোনো মিডিয়াতে সম্পৃক্ত নই আমি। এখন এদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করছি । পাশাপাশি নিজের একটা কমিউনিটি নিউজ পোর্টাল আছে । সে যাইহোক, গতকদিন আমাকে কিছুটা সময় হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে অনেকের মতামত, বিভিন্ন তথ্য আমাদের পোর্টালের ফেসবুক পেজে শেয়ার করতে দেখছেন। আমি বলে রাখি, যে শেয়ারগুলো করা হচ্ছে সেগুলি সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব মতামত।
সরাসরি মাঠে কাজ না করলেও একজন নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে আমি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের মতামত গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি একটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত আমার অনেক পরচিতি অপরিচিতি ভাই বোন সহকর্মী, বন্ধুরা আছে সেখানে। কারো এই মতামতগুলো যখন নিজেদের পক্ষে যাচ্ছে তখন কেউ ভাবছেন এটা আওয়ামীলীগপন্থী সরকার সমর্থিত পেজ। আবার কেউ মনে করছেন এটি বিএনপিপন্থী পেজ।
এতটুকু নিশ্চয়তা আপনাদের দিতে পারি যে, দেশে থাকতে আপনারা আমাকে যেমন নিরপেক্ষ দেখেছেন আমি ঠিক তেমনই আছি। আমি দেশের বা সরকারের সব বিষয় নিয়ে কথা বলিনা। সময়ের অভাবে এটা আমার জন্য হয়ে ওঠেনা । এখানে প্রচণ্ড ব্যস্ত জীবন আমাদের। যারা বিদেশে আছেন তারা নিশ্চয় বুঝছেন সেটা।
তারপরও কখনো কখনো দেশ নিয়ে, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে হয় । কখন সেটা? যখন দেখি কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো নায্য দাবি নিয়ে হাজার হাজার ভাই বোন রাস্তায় নেমেছে আর ভুল করে হোক বা কারো প্ররোচনায় সেই নিরীহ ভাই বোনের উপর রাষ্টীয়ভাবে গুলী চালানো হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই নায্য দাবিকে বিএনপি জামাতের কাজ বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে দেশকে আরো সংঘাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বা পাশের কোনো বন্ধু দেশের টিভি চ্যানেল নিরীহ এসব সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইসলামিক জঙ্গি বলে বহির্বিশ্বে পরিচিতি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
অথবা যখন দেখি কিছু তেলবাজ, ধান্দাবাজ, বিবেকহীন সাংবাদিকের উস্কানিমূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিঁয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিকবিদিক হারিয়ে বিবেকহীনের মতো কথা বলছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে দেশের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও কাজ করছেনা । জাতীয় পত্রিকা , টেলিভিশনগুলি দেশের সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতে পারছেনা । তাই কোনটা সত্য, কোনটা অসত্য এটি যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আমরা যারা বিদেশে আছি সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কি হচ্ছে আমাদের ভাইবোন ও তাদের পরিবারের। কোনদিকে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। কারণ দেশটা আমাদের সবার। তাই আমি বলব আপনারা সঠিক তথ্য পরিবেশন করুন। যখন যেটা দেখছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটা যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। সেটা যে পক্ষই হোক না কেন।
যাহোক, অনেকদিন পরে দেশে ফোনে কথা হলো । জানা গেলো, দেশের সরকারপন্থী চ্যানেলগুলোতে এখন শুধু ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ দেখানো হচ্ছে। আন্দোলনে কতজন মারা গেলো বা নির্যাতন নিপীড়নের কোন খবর প্রকাশ করা হচ্ছেনা। তাই কারফিউর মধ্যে ঘরে থাকা মানুষগুলো ও কিন্তু সঠিক খবর পচ্ছেনা। টেলিভিশন গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আপনি যদি সৎ, সাহসী সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন তবে আপনাকে সরকার ও বিরোধী দল সব পক্ষের ভালো, মন্দের আলোচনা, সমালোচনা করতে হবে। আর এটা আপনি তখনই করতে পারবেন যখন সরকার বা বিরোধী কোনো পক্ষের সাথে আপনি আপনার প্রফেশনাল সম্পর্কের বাইরে অন্য কোনো লেনদেন্ বা বিশেষ সুবিধা নিতে যাবেননা। আর সবার উপরে থাকবে দেশ ।
সবশেষে বলতে চাই, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে দেশ ও জাতির যেকোন নায্য অধিকার ও দাবি আদায়ের পক্ষে আমার সমর্থন্ আগেও ছিল, এখনো আছে , ভবিষ্যতে ও থাকবে। দেশ যখন বিপথে যাবে তখন আমরা কথা বলবই সত্য ও ন্যায় এর পক্ষে। তাই সেটা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত বা জাতীয়পার্টি যে রাজনৈতিক দলের বিপক্ষেই হোক না কেন। আমরা হলাম বিবেকবান সাধরণ জনতা । বাংলাদেশের নষ্ট হয়ে যাওয়া রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দেইনি।