আর্থিক সংকটে বিএনপি

আর্থিক সংকট পিছু ছাড়ছে না এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির। ২০১৯, ২০ সালের মতো ২০২১ সালেও তহবিল ঘাটতিতে দলটি। গত বছরে দলটির আয়ের চেয়ে সোয়া কোটি টাকা ব্যয় বেশি হয়েছে।
২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় বিএনপির আয় কমেছে ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৮১৯ টাকা। অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭১ টাকা। এই ঘাটতি মেটানো হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মনোনয়ন ফরম বিক্রির সঞ্চিত অর্থ থেকে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ২০২১ পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়। বিএনপির অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দলটির আয় ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা। মোট ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ টাকা। রিজভী বলেন, ঘাটতি মেটানো হয়েছে ব্যাংক রিজার্ভ থেকে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির আর সঞ্চয় হয়নি। ঐ বছরে বিএনপি আয় দেখিয়েছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা। সে সময় দলটির তহবিল দাঁড়িয়েছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা। এরপর থেকে টানা তিন বছর কেবল ব্যয় বেড়েছে। ২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। ব্যয় বেশি হয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা, যা বিএনপির তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে। ২০১৯ পঞ্জিকা বছরের যে হিসাব দিয়েছিল দলটি, তাতে সে বছর আয়ের চেয়ে তিন গুণের বেশি ব্যয় হয়েছিল। সে সময় বিএনপির আয় করেছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। আয়-ব্যয়ের পার্থক্য হচ্ছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা। অর্থাৎ আয়ের তিন গুণেরও বেশি ব্যয় হয়েছে।
এর আগে টানা তিন বার ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি ছিল দলটির। বিএনপি মনোনয়ন ফরম বিক্রি, দলীয় সদস্যদের মাসিক চাঁদা, এককালীন অনুদান হতে আয় করে থাকে। আর অফিসের বিভিন্ন খরচ, নির্বাচনি ব্যয়, ত্রাণ কার্যক্রম, কর্মচারীর বেতন-ভাতা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন প্রভৃতি খাতে ব্যয় করে থাকে। বিএনপি কর্মচারীদের বেতন-বোনাস প্রদানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। ৭৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এ খাতে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দলগুলোর সবচেয়ে বড় আয়ের খাত হলো নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সেই অর্থ সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তহবিল বড় না হয়ে কেবল দিন দিন ছোট ছোট হচ্ছে।
২০১৭ সালে দলটি মোট আয় দেখিয়েছিল ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা। আর মোট ব্যয় দেখিয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে রয়েছে। ২০১৬ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা। আয় বেশি হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
এর আগের তিন বছর দলটি ঘাটতিতে ছিল। ২০১৫ পঞ্জিকা বছরে বিএনপি ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা ঘাটতি দেখিয়েছিল। ঐ সময় দলটি আয় দেখিয়েছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা। ২০১৪ পঞ্জিকা বছরে দলটি বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৪ টাকা আয় দেখিয়েছে। আর ব্যয় দেখিয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। এতে আয়ের চেয়ে ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৬ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে দলটির। ২০১৩ পঞ্জিকা বছরে দলটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা আয়ের বিপরীতে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা ব্যয় দেখিয়েছিল। সে সময় ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।
বর্তমান সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না—রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে এলে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ বর্জনের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। আর বর্তমান কমিশনকে মেনে না নিলেও তাদের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা নিয়েও কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন, নির্বাচনের সংলাপ এটা নিয়ে তো আর আলাপ নয়। হিসাব দিতে হয়, আইনে আছে তাই দিলাম।’ সংলাপ বর্জন নিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘সংলাপ রাজনৈতিক বিষয়। মহাসচিব ইতিমধ্যে বলেছেন, আমরা এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্হাশীল নই। কেননা এখন পর্যন্ত যে কথাবার্তা দেখছি, সেটা একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এটা আমরা আশা করছি না। এটা তাদের আচরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করছে।
তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের কথা হলো, যে সরকার আছে এই সরকার; সব রাজনৈতিক দল জানে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানে অবৈধ সরকার। তার অধীনে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর এটা সরকার নিজেই প্রমাণ করছে।
সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন রিজভী। বলেন, সেই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তখন নির্বাচনে যাব।-ইত্তেফাক
এবিসিবি/এমআই