Type to search

Lead Story জাতীয়

সরকারি ভাতা সরাসারি যাবে মোবাইল অ্যাকাউন্টে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এবিসিবি নিউজ-abcb news

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীকে ভাতা প্রদান অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণলায়ের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ব্যাংক থেকে ভাতার অর্থ তুলতে হতো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীকে। মুজিব বর্ষে সে দুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন থেকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা প্রায় ১ কোটি মানুষ ভাতা সরাসরি পাবে তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে। সরকারপ্রধান তার বক্তব্যে সমাজের অনগ্রসরদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানান।

প্রাপ্ত সুবিধা যেন সরাসরি সুবিধাভোগীর হাতে পৌঁছায়, তা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিয়ে অনগ্রসরদের কেউ যেন সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন না ভাবেন তাই ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সে সঙ্গে কর্মক্ষমদের তাগিদ দেন, শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার। পরে চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোনার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেদিন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে শপথ নিই, সেদিনই বলেছিলাম আমি মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করব। প্রধানমন্ত্রিত্ব আর কিছু না, প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে এটা যে, আমি কাজ করার সুযোগটা পাচ্ছি। কাজ করার ক্ষমতাটা পাচ্ছি। কাজেই সেই মানুষের জন্য কাজ করব, মানুষের সেবা করব। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।

২০০৭ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও আমি বিরোধী দলে ছিলাম, তারপরও। সাধারণত আমাদের দেশে সেটা হয় না। সবসময় দেখা যায়, যারা ইমার্জেন্সি দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় যে থাকে তাকেই ধরে। কিন্তু সেই সময় আমাকে আগে ধরল।

গ্রেফতারের পর ভবিষ্যতে দেশকে কীভাবে উন্নত, সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলা যায় কারাগারে বসেই সেই পরিকল্পনা করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বসে থাকিনি। ওই কারাগারে যখন ছিলাম, প্রথম যখন গেলাম, তখনই আমি চিন্তা করলাম যে একদিন না একদিন তো এখান থেকে মুক্তি পাব, দেশের জন্য কাজ করব। তা হলে কী কাজ করব, কোন সালে কী করব, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা, মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করা, শিক্ষার হার বাড়ানো, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া- এসব বসে বসে চিন্তা করে করে আমি লিখে রাখতাম।

এরপর ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুত করতে গিয়ে সেসব পরিকল্পনাসহ অন্যান্য পরিকল্পনা যুক্ত করে ‘দিনবদলের সনদ’ ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার শুরুতে রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত কবিতা ‘স্টপিং বাই উডস অন এ স্নোয়ি ইভনিং’-এর ‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ/বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ/অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ- কবিতাটির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন- অন্ধকার, ঘন অন্ধকার বনায়ন… দেখতে সুন্দর। কিন্তু আমাকে এই ঘন অন্ধকারের সেই ঘন গভীর জঙ্গল পার হতেই হবে এবং আমার চলার পথ শেষ নেই। মাইলের পর মাইল আমাকে যেতে হবে। আমাকে ক্লান্ত হলে চলবে না, ঘুমালে চলবে না। আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে আমাকে পৌঁছাতেই হবে। আর সেই লক্ষ্যটা কী? সেই লক্ষ্যটা হলো এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস রেখে তাদের বারবার ভোট দিয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেসব ভাতা দিচ্ছি, এটা যেন যথাযথ সঠিকভাবে যে মানুষটাকে আমরা দেব তার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। তাদের অর্থটা তাদের হাতে যাবে। তাদের যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবে। সেটার ব্যবস্থা করতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সেই ব্যবস্থাটা আপনারা নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন বয়স্কভাতা শুরু করি আমি এভাবে হিসাব করেছিলাম যে, কেউ ভাতার ওপর শুধু নির্ভরশীল হোক সেটা আমরা চাই না। ভাতা পাবে কিন্তু যার কর্মক্ষমতা আছে সে নিজে কিছু কাজও করবে, একেবারে ঘরে বসে থাকবে না। যেন অন্তত ১০ কেজি চাল কিনতে পারে সেই হিসাবে আমরা ভাতা দেওয়া শুরু করি। তখন ১০ টাকায় এক কেজি চাল পাওয়া যেত। তাই আমরা ১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া শুরু করি। এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশিসংখ্যক লোক পাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের এটাই লক্ষ্য থাকবে যে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেই কাজ করতে গিয়ে শুধু সরকার একা না, যে যেখানে আছেন তাদেরও নিজ নিজ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রত্যেক এলাকার গৃহহীন ও ভূমিহীনের তালিকা পেলে তাদের সরকার বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের সামর্থ্য আছে আপনারা নিজেরাও করে দেবেন। সবাই মিলে যদি আমরা করি, এই দেশটাকে আমরা নিশ্চয়ই এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ করতে পারব। এই বিশ্বাস আমার আছে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপকারভোগী ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নদীগুলো খনন করে নদীপথ সচল করব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সব নদীই খনন করব। ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছি, কোনো নদী বাদ থাকবে না। সব খনন করে সব নদী চালু করব, নদীপথগুলোও সচল করব। অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রান্তে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাটকে আমরা পুরো পরিবর্তন করে দেব। অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটি হলে ওখানকার অবস্থাটাই বদলে যাবে। একসময় আমরা প্ল্যান তৈরি করব। কোনো চিন্তা নেই। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মতবিনিময়ে চীনের সঙ্গে তিস্তা নদী খননের চুক্তির বিষয়ে জানতে চান। তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হবে হবে, আমরা সব নদীই খনন করব। ব্যাপক কর্মসূচি নিচ্ছি। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ নিয়েছি। কোনো নদী বাদ থাকবে না। সব আমরা খনন করে সব নদী চালু করব, নদীপথগুলো সচল করব। তিস্তা ব্রিজটাও শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৈরি, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

Translate »