Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব চায় বললেন বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিকীর সম্মেলন এবার যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির স্থানীয় সময় ৯ জুলাই মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওয়াশিংটনে ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং শীর্ষ নেতারা হাজির হতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এবারের সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। তবে তিন দিনের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রার্থিতা এবং বৈশ্বিক রাজনীতিও আলোচনায় আসতে পারে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার এমএসএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব চায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আমি ন্যাটোকে সম্প্রসারণ করেছি। আমি মনে করি যে সারা বিশ্বের যে কোনো ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব।’ ন্যাটো এর আগে কখনো আকারে এত বড় ছিল না। কিন্তু তার ৭৫তম বার্ষিকীতে এই সংগঠন ভেতর এবং বাইরে থেকে তার অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, চীনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ এবং গাজায় ইসরাইল-হামাস সংঘাত তো আছেই, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাদের মিত্রদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে এই জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্যকে নেতৃত্ব দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প ন্যাটোর প্রতি আস্থাশীল নন।

বাইডেনের রাজনৈতিক সমস্যাগুলো যখন দেশে এবং বিদেশে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তখন ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশেষ করে ফ্রান্স এবং হাঙ্গেরিতে উগ্র ডানপন্থিদের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে তাদের নিজস্ব সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ভিতকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টল্টেনবারগ রবিবার গুটিকয়েক রিপোর্টারের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের সময় বলেন, ন্যাটো সদস্যরা শান্তি চায় এবং সেটা অর্জন করা যাবে যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুঝতে পারেন তিনি রণাঙ্গনে জয়ী হবেন না। তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে দ্রুত পথ হচ্ছে যুদ্ধে হেরে যাওয়া। কিন্তু এর ফলে শান্তি আসবে না। আসবে দখলদারিত্ব।’

বাইডেনের দিকে সবার দৃষ্টি

ট্রাম্পের সঙ্গে ২৭ জুনের বিতর্কে দুর্বল পারফরম্যান্সের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এবং তার পুনর্নির্বাচনি প্রচারণা ধরে রাখতে যখন বাইডেন হিমশিম খাচ্ছেন, তখন তিনি বলেছেন, এখনো তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। আর তার প্রমাণ পাওয়ার জন্য ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে তার কর্মকাণ্ডের দিকে জনগণের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন— যদিও ন্যাটো নেতারা স্বীকার করেছেন যে আমেরিকান নির্বাচনের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং প্রকাশ্যে মন্তব্য করার সম্ভাবনা কম।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান-জার্মান ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট জেফ রাথকে বলেন, ‘নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল ন্যাটোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জোটের প্রায় সব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানই একই রকম মনে করেন, যদিও তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান।’ হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের ফিরে আসার সম্ভাবনা ইউরোপের অনেককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাদের আশঙ্কা যে ট্রাম্প ন্যাটো বা ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি কমাতে বা সেগুলো সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিতে পারেন।

বাইডেনের দিকে মনোযোগ যতটাই থাকুক না কেন ন্যাটোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরো ৩১ জন নেতার মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের কয়েক দিন পর এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্বমঞ্চে তার প্রথম আবির্ভাব ঘটবে। যদিও স্টারমার ন্যাটো এবং ইউক্রেন উভয়ের জন্য অব্যাহত দৃঢ় সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবে ডানপন্থি দলগুলোর অগ্রগতি এবং গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে পশ্চিমা সমর্থনের বিরোধী বামপন্থি দলগুলোর সমর্থন লাভ লন্ডনের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, ফ্রান্সের অস্থিতিশীলতা, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সরকার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে।

ন্যাটোর ভবিষ্যত

অনেক দিক থেকে, জোটকে আগে কখনই এতটা শক্তিশালী দেখায়নি। রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ন্যাটোতে ঐ দুই নতুন সদস্য যোগ হওয়ার ফলে এর মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২। একই সময়ে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপীয় সদস্য বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র-ইউক্রেন এবং একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যাটোর প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে। কিন্তু ন্যাটোর অবস্থান বেশ ভঙ্গুর। এর নীতিমালা সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হতে হয় এবং দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে। ন্যাটো নেতারা ‘ওপেন ডোর বা উন্মুক্ত দ্বার’ নীতি পুনরায় ব্যক্ত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে— যা হচ্ছে যে কোনো দেশ প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ করতে সক্ষম হলে সদস্যপদ পাবে। তবে এই সপ্তাহে ইউক্রেন তার প্রত্যাশিত আমন্ত্রণটি পাচ্ছে না। —ভয়েস অব আমেরিকা

এবিসিবি/এমআই

Translate »